ভারতে তুষারধসে নিখোঁজদের জীবিত উদ্ধারের আশা ক্ষীণ
ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য উত্তরাখণ্ডে হিমালয়ের হিমবাহ ধসে রাজ্যের চামোলি জেলার জোশীমঠ এলাকায় নিখোঁজ শ্রমিকরা কেউ বেঁচে নেই বলে আশঙ্কা করছে প্রশাসন। সেক্ষেত্রে এই দুর্যোগের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা কম করে হলেও ১০০-১৫০ জন হতে পারে বলে ধারণা করছেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যসচিব ওম প্রকাশ।
তবে এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি হতে পারে বলে জানিয়েছেন জোশীমঠ এলাকার লোকজন ও পুলিশ। স্থানীয় সূত্রের খবর, রোববার আকস্মিক ওই জলোচ্ছাসের সময় জোশীমঠের তপোবন বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের নিকটবর্তী টানেলে আটকে পড়েছিলেন বহু শ্রমিক। তাদের কোনও খোঁজ এখনও মেলেনি। এছাড়া ওই এলাকার ঋষিগঙ্গা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটিও পুরোপুরি ভেসে গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বিজ্ঞাপন
সরকারের তরফ থেকে অবশ্য এ নিয়ে এখনও কোনও বিবৃতি দেওয়া হয় নি। আপাতত পরিস্থিতি মোকাবিলার দিকেই মন দিয়েছে সরকার। উদ্ধার কাজে নেমেছে ভারতের বিমানবাহিনী। রোববার দুপুরে ভারতীয় বিমানবাহিনীর সি ১৩০ এবং এএন ৩২-এ দু’টি উড়োজাহাজে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর বেশ কয়েকটি দলকে উত্তরাখণ্ডের রাজধানী দেরাদুনের জলি গ্রান্ট বিমানবন্দর থেকে উড়িয়ে আনা হয় জোশীমঠে।
এছাড়া ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রায় ৬০০ জনের একটি দলও রওনা হয়েছে জোশীমঠের উদ্দেশ্যে। উদ্ধার কাজের জন্য মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার।
বিজ্ঞাপন
পাশাপাশি ভারতীয় বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারও রয়েছে উপদ্রুত এলাকায়। সংবাদসংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওমপ্রকাশ জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ শুরু করেছে ভারত-তিব্বত সীমান্তরক্ষী বাহিনী (আইটিবিপি) এবং কেন্দ্র-রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।
চামোলির রেনি গ্রামে চিকিৎসক দল পাঠানো হয়েছে। জরুরি পরিস্থিতির জন্য জোশীমঠে তৈরি করা হয়েছে ৩০ শয্যার একটি হাসপাতালও। পার্শ্ববর্তী শ্রীনগর, ঋষিকেশ, জলিগ্রান্ট এবং দেরাদুনেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে হাসপাতাল।
এছাড়া পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে রোববার বিকেল সাড়ে চারটায় মন্ত্রিসভার সচিব রাজীব গৌরার নেতৃত্বে বৈঠকে বসে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা কমিটি (এনসিএমসি)। উদ্ধার কাজ কোন পথে, তা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি বৈঠকে আলোচনা করা হয় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের বিষয়েও।
এদিকে রোববারের এই ঘটনায় টুইট করে উদ্বেগ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাষ্ট্রপতি লেখেন, ‘উদ্বিগ্ন বোধ করছি। জোশীমঠের এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের জন্য প্রার্থনা করছি।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগেই জানিয়েছিলেন, তিনি পুরো বিষয়টির উপর নজর রাখছেন। উত্তরাখণ্ডের প্রশাসন এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর থেকে প্রতিমুহূর্তের খবর নিচ্ছেন। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘গোটা দেশ উত্তরাখণ্ডের পাশে আছে। উত্তরাখণ্ডের জন্য প্রার্থনা করছে।’
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র অমিত শাহ লেখেন, উত্তরাখণ্ডকে এই সঙ্কটকালে সবরকম সাহায্য করবে কেন্দ্র। উদ্ধারকাজের জন্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও বায়ুসেনা পাঠানোর ঘোষণাও করেন টুইটে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্তদের পরিবারকে সহানুভূতি জানিয়েছেন।
উত্তরাখণ্ড প্রশাসন জানিয়েছে, উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় হিমবাহে ফাটল ধরার পর যে তুষারধস নামে, তার জেরেই ধউলিগঙ্গার জলস্তর বেড়ে যায়। প্রবল জলচ্ছ্বাসে ঋষিগঙ্গা বাঁধ ভেঙে যাওয়াতেই বাড়ে বিপত্তি।
বন্যার জল বেড়ে ধৌলিগঙ্গার দুই তীরের বেশ কয়েকটি গ্রাম ভাসিয়ে নিয়ে যায়। বেশ কয়েকটি সেতু ভেঙে যায়। ভেসে যায় ধউলিগঙ্গার দুই তীরের দুটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ঋষিগঙ্গা ও তপোবন বিষ্ণুপুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পও। জল গিয়ে অলকানন্দা নদীতে পৌঁছেছে বলেও জানিয়েছে আইটিবিপি।
রোববার দুপুর দু’টো নাগাদ ভাগিরথী নদীর উপর তেহরি বাঁধটিকে অবশ্য ঠিক করা গিয়েছে। আইটিবিপি জানিয়েছে, পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। তবে এখনও অনেক কাজ বাকি। আইটিবিপি-র ২৫০ জনের একটি বাহিনী কাজ করছে ধউলিগঙ্গার তীরে জলচ্ছ্বাসে বিধ্বস্ত গ্রামগুলিতে।
তবে সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা কঠিন। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। বাড়তে পারে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও।
সূত্র: আনন্দবাজার, এনডিটিভি
এসএমডব্লিউ