আল জাজিরার ভিডিও: বিটিআরসির নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে হাইকোর্টের প্রশ্ন
কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরায় প্রচারিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে সরাতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট।
আদালত বিটিআরসির আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, গত ১০ দিনে কেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে ভিডিও অপসারণ করা গেল না। দেশ ও বিদেশের কোটি কোটি লোক এটা প্রত্যক্ষ করেছে। এখন এটা বন্ধ বা অপসারণ করা না করা একই কথা।
বিজ্ঞাপন
হাইকোর্ট বলেন, আল জাজিরা টেলিভিশন নেটওয়ার্কে প্রচারিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ ডকুমেন্টারিতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সম্মানহানি হয়েছে। ১০ দিনেও যদি বিটিআরসি এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে না পারে তাহলে তারা ওখানে বসে আছে কেন?
তখন বিটিআরসির আইনজীবী রেজা-ই-রাকিব আদালতকে বলেন, আদালতের আদেশ দিয়ে আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ করা সম্ভব নয়। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যাতে এ সংক্রান্ত ডকুমেন্টারি প্রচার না করা হয় সেজন্য পদক্ষেপ নিতে আদালত আদেশ দিতে পারেন। যেমনটা নোয়াখালীর এক নারীর নির্যাতনের ঘটনায় দেওয়া হয়েছিল। আর দেশের মধ্যে আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ করা সম্ভব বলেও জানান এ আইনজীবী।
বিজ্ঞাপন
রিটকারী আইনজীবী এনামুল ইমন বলেন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা অক্ষুণ্ন রাখতে এ রিট করা হয়েছে। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী বলেন, বিটিআরসির উচিত ছিল পদক্ষেপ নেওয়া, কিন্তু এ ক্ষেত্রে তারা নিষ্ক্রিয়তা দেখিয়েছে।
পরে আদালত বাংলাদেশে আল জাজিরা টেলিভিশনের সম্প্রচার বন্ধে ও অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ সরাতে হাইকোর্ট কোনো আদেশ দিতে পারে কি না, সে বিষয়ে মতামত জানতে ৬ জন অ্যামিক্যাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) নিয়োগ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ ৬ আইনজীবী হলেন- সিনিয়র আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ফিদা এম কামাল, সিনিয়র আইনজীবী আব্দুল মতিন খসরু, সিনিয়র আইনজীবী কামাল উল কামাল, প্রবীর নিয়োগী ও আইনজীবী শাহদীন মালিক। তাদের আদালতের এ আদেশ আজই পৌঁছে দিতে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখাকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টায় অ্যামিক্যাস কিউরিদের মতামত শুনবেন আদালত।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এনামুল কবীর ইমন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী, বিটিআরসির পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট রেজা-ই-রাকিব।
এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে কাতারভিত্তিক টেলিভিশন আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। রিটে সংবাদমাধ্যমটির প্রচারিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ প্রতিবেদনটি ইউটিউব, টুইটার, ফেসবুকসহ সব অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে অপসারণ করার নির্দেশনা চাওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এনামুল কবীর ইমন এ রিট দায়ের করেন।
রিটে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, তথ্য ও প্রযুক্তি সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, পুলিশ মহাপরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি আল জাজিরায় বাংলাদেশ নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন সম্প্রচারিত হয়, যা ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। প্রতিবেদনে উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়। সরকারিভাবে এ প্রতিবেদনের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও এ প্রতিবেদনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে আল জাজিরার দেওয়া ওই প্রতিবেদনটিকে অসত্য বানোয়াট বলে অভিহিত করা হয়েছে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো এক প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, ‘আল জাজিরায় প্রচারিত ও প্রকাশিত প্রতিবেদনটির তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ জানাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সদরদপ্তর।’
আল জাজিরার প্রতিবেদনটি মন্দ সাংবাদিকতার দৃষ্টান্ত
অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এবং অনেক ক্ষেত্রেই সাংবাদিকতার নীতি নৈতিকতা না মেনে প্রচার করা হয়েছে বলে মনে করছে সম্পাদকদের বৃহত্তম সংগঠন এডিটরস গিল্ড।
এডিটরস গিল্ডের সভাপতি মোজাম্মেল হক বাবু স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পুরো বিষয়টি একটি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে, অথচ শিরোনাম করা হয়েছে ‘অল দ্যা প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’। বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারিত বিশেষ কিছু অভিযোগের বয়ান দিতে গিয়ে প্রমাণহীনভাবে ‘প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ টার্মটা ব্যবহার করা মন্দ সাংবাদিকতা বলে দাবি করছে এডিটরস গিল্ড। সংগঠনটি মনে করে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নির্মিত ও পক্ষপাতদুষ্ট একটি তথ্যচিত্র কোনোভাবেই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার দৃষ্টান্ত হতে পারে না। পুরো ডকুমেন্টারিটির ভিত্তি হলো একজন মানুষের কিছু অনানুষ্ঠানিক ও আড্ডার আলাপ, যার কোনো গ্রহণযোগ্য প্রমাণ এতে উপস্থাপিত হয়নি।
আল জাজিরার প্রতিবেদন মনগড়া, উদ্দেশ্যমূলক ও মিথ্যা
আল জাজিরা প্রকাশিত প্রতিবেদনে পুলিশ সম্পর্কে ‘মনগড়া, উদ্দেশ্যমূলক ও মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে’ দাবি করে প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম আল-জাজিরার ওই প্রতিবেদনের তীব্র নিন্দা জানান।
আল জাজিরার বিরুদ্ধে মামলা করবে বাংলাদেশ
প্রকাশিত প্রতিবেদনের জন্য গণমাধ্যমটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার কথা ভাবছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বনানী আর্মি স্টেডিয়ামে এক অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আলজাজিরার প্রতিবেদনটি বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আল জাজিরার প্রতিবেদনে যেসব ভুল তথ্য আছে, সেগুলো আমরা তুলে ধরব। আর আমরা মামলা করব, সেটার জন্য কাজ করছি।’
এমএইচডি/এসএসএইচ/এসএম