বরগুনার পাথরঘাটা এলাকার ফাতেমা বেগমকে অপহরণের অভিযোগে তার সাবেক স্বামী মো. জাকির হোসেনের করা মামলায় বর্তমান স্বামী শাহ আলমকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এই মামলায় বিচারিক আদালতে রায়ে ২০ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত শাহ আলমের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পি।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০১২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ফাতেমা বেগম তার স্বামী জাকির হোসেনকে তালাক দেন। পরে শাহ আলমের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ফাতেমা। ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি ফাতেমা-শাহ আলমের ঘরে প্রথম সন্তান এবং ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট দ্বিতীয় সন্তান জন্মগ্রহণ করে।

২০১২ সালের ৫ মে অপহরণের ঘটনায় মো. জাকির হোসেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে শাহ আলমসহ আট জনের বিরুদ্ধে বরগুনা উপজেলার পাথরঘাটা থানায় মামলা করেন। সে মামলার এজাহারে মো. জাকির হোসেন অভিযোগ করেন, তার স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে আসামিরা অপহরণ করেন।

পরে ২০১২ সালের ৩০ আগস্ট এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পাথরঘাটা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুস সাত্তার শাহ আলমসহ আট জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। পরে ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।

এই মামলায় ফাতেমা বরগুনার পাথরঘাটার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২২ ধারার জবানবন্দিতে বলেন, ‘আমাকে শাহ আলম অপহরণ করেননি। শাহ আলমকে আমি মাসখানেক আগে স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছি। ২০০৭ সালে জাকিরের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু জাকিরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে শাহ আলমকে বিয়ে করি। তবে দ্বিতীয় বিয়ের ৪/৫ মাস আগে জাকিরকে তালাক দেই। সে এখন আর আমার স্বামী নয়, আমাকে কেউ অপহরণ করেনি।’

পরবর্তী সময়ে এই মামলার সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান আসামি শাহ আলমকে ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়ে রায় দেন। অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এই রায়ে বলা হয় যে, ফাতেমা অপহরণ হননি এবং প্রথম স্বামীকে ডিভোর্স দিয়েছেন বলে ২২ ধারায় যে জবানবন্দি দিয়েছেন তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় মনে হচ্ছে, ডিভোর্স না দিয়েই তিনি শাহ আলমের কাছে চলে গেছেন। আইনের চোখে এটা অপরাধ মনে হওয়ায় আসামিকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

সবশেষ বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ও জামিন আবেদন করেন শাহ আলম। সে আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট উল্লেখিত আদেশ দেন।  

এমএইচডি/এফআর