অভিজিৎ হত্যা মামলার রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট
অভিজিৎ রায়
বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাইব্যুনালের অ্যাসিস্ট্যান্ট পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) মো. গোলাম ছারোয়ার খান (জাকির) বলেছেন, রায়ে আমরা আপাতত সন্তুষ্ট।
মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে অভিজিৎ হত্যা মামলার রায়ের পর সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
গোলাম ছারোয়ার খান বলেন, এ মামলায় মোট আসামি ছয় জন। এর মধ্যে দুজন পলাতক। কারাগারে থাকা চার জনকে আজ আদালতে হাজির করা হয়। আসামিদের মধ্যে পাঁচ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইবুনাল।
তিনি বলেন, আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, ‘অভিজিৎ একজন বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার ছিলেন। তিনি বাংলা একাডেমির বইমেলায় লেখকদের আড্ডায় অংশগ্রহণ করে ফেরার পথে আক্রমণের শিকার হন। নাস্তিকতার অভিযোগে নিষিদ্ধ সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্যরাসহ পরিকল্পনাকারীরা সাংগঠনিকভাবে অভিজিৎ রায়কে হত্যা করেন। স্বাধীনভাবে লেখালেখি ও মতপ্রকাশের জন্যে অভিজিৎ রায়কে নিজের জীবন দিতে হয়। অভিজিৎ হত্যার উদ্দেশ্য হচ্ছে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে বন্ধ ও নিরুৎসাহিত করা। যাতে ভবিষ্যতে কেউ স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে না পারে। এজন্যই অভিজিৎকে হত্যা করা হয়েছে’। এই রায়ে আমরা আপাতত সন্তুষ্ট।
বিজ্ঞাপন
রায়ের পর মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ঢাকা মেট্রোপলিটন আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. আব্দুল্লাহ আবু বলেন, অন্যায় করে কেউ পার পায় না। এ রায় জঙ্গিদের জন্য একটি সতর্কবার্তা। এ রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান নেই।
প্রায় ছয় বছর পর ঘোষণা করা হয়েছে ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার রায়। মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন, মো. আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহা, মো. আরাফাত রহমান, সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া (বরখাস্ত) ও আকরাম হোসেন ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে হাসিবুল ওরফে আবদুল্লাহ। অপর আসামি শাফিউর রহমান ফারাবীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া (বরখাস্ত) ও আকরাম হোসেন ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে হাসিবুল ওরফে আবদুল্লাহ পলাতক রয়েছেন।
২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলা চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি এলাকায় ব্লগার অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হন তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ। ওই ঘটনায় অভিজিতের বাবা প্রয়াত অধ্যাপক ড. অজয় রায় শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন।
ছেলে হত্যার বিচারের আশায় অসুস্থ শরীরে হুইল চেয়ারে বসে ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর আদালতে এসে সাক্ষ্য দেন ড. অজয় রায়। এর দেড় মাসের মাথায় ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর মারা যান তিনি। দেখে যেতে পারলেন না ছেলে হত্যার বিচার।
২০১৯ সালের ১৩ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (পরিদর্শক) মো. মনিরুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ওই বছরের ১ আগস্ট ছয় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মুজিবুর রহমান।
২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায়ের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্যদিয়ে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। গত ২১ জানুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।
আরএইচ/ওএফ