ময়মনসিংহের ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তঃসত্ত্বা মায়ের মৃত্যুর আগে অলৌকিকভাবে জন্ম নেওয়া শিশুটির পরিবারকে আপাতত ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে তিন মাসের সময় আবেদন করেছে ট্রাস্টি বোর্ড। আদালত এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী রোববার (৭ আগস্ট) দিন ধার্য করেছেন।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এই দিন ধার্য করেন।

আদালতে ট্রাস্টি বোর্ডের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী রফিকুল ইসলাম। রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ মাহসিব হোসাইন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা।

এর আগে গত ১৯ জুলাই সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তঃসত্ত্বা মায়ের মৃত্যুর আগে জন্ম নেওয়া শিশুটিকে দেখাশোনার জন্য কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। আগামী তিন মাসের মধ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে এ কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে।

একইসঙ্গে নবজাতকের পরিবারকে আপাতত ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৫ দিনের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডকে এ টাকা দিতে বলা হয়। পাশাপাশি শিশু ও তার পরিবারকে কেন পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।

ময়মনসিংহের ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় মা-বাবা ও বোনের মৃত্যুর ঘটনায় অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া সদ্যভূমিষ্ঠ শিশুর ১৮ বছর পর্যন্ত যাবতীয় খরচ রাষ্ট্রকে বহনের নির্দেশনা গতকাল ১৮ জুলাই হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। আইনজীবী কানিজ ফাতেমা তুনাজ্জিনার পক্ষে ব্যারিস্টার সৈয়দ মাহসিব হোসাইন এ রিট দায়ের করেন। রিটে শিশুটির যাবতীয় খরচ বহন এবং তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়।

আরও পড়ুন : ট্রাকচাপায় অন্তঃসত্ত্বা মায়ের মৃত্যু, জন্ম নিল নবজাতক

প্রসঙ্গত, শনিবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে ত্রিশালের কোর্টভবন এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় ট্রাকচাপায় প্রাণ হারান অন্তঃসত্ত্বা রত্না বেগম (৩২), তার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম (৪০) এবং তাদের ছয় বছরের মেয়ে সানজিদা। এ সময় অলৌকিকভাবে মায়ের গর্ভ ফেটে ভূমিষ্ঠ হয় ফুটফুটে এক নবজাতক। ভূমিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যায় পুলিশ ও আশপাশের লোকজন। পরে নবজাতকটিকে উদ্ধার করে নেওয়া হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে নেওয়ার পর জানা যায়, জীবিত আছে নবজাতকটি।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও উন্নত চিকিৎসার জন্য নবজাতকটিকে পরে ময়মনসিংহ সদরের সিবিএমসি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে এক্সরে রিপোর্টে জানা যায়, তার ডান হাতের দুটি হাড় ভেঙে গেছে। এরপর নগরীর লাবীব হাসপাতালে নেওয়া হয় নবজাতকটিকে। দুই দিন সেখানে থাকার পর জন্ডিসে আক্রান্ত হওয়ায় সোমবার রাতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

লাবীব হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহজাহান বলেন, শিশুটি কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (সিবিএমসি) শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কামরুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে ছিল। কিন্তু জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দেওয়ায় চিকিৎসক ফটোথেরাপি দেওয়ার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সোমবার রাতে শিশুটিকে সেখানে ভর্তি করা হয়।

এমএইচডি/এমএইচএস