নিহত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ আগামী রোববার (২৭ ডিসেম্বর) ধার্য করেছেন আদালত। মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এ আদেশ দেন।

মঙ্গলবার এই মামলার উচ্চ আদালতের বদলি সংক্রান্ত আদেশ দাখিলের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আবেদন উত্থাপিত হয়নি এই মর্মে সনদ দাখিল করেন

মঙ্গলবার এই মামলার উচ্চ আদালতের বদলি সংক্রান্ত আদেশ দাখিলের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আবেদন উত্থাপিত হয়নি এই মর্মে সনদ দাখিল করেন। এরপর আদালত মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২৭ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন।

সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর আবু আবদুল্লাহ ভূঁইয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে বহুল আলোচিত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার বিচারক পরিবর্তন ও আদালত স্থানান্তর চেয়ে আসামিদের আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।

সোমবার (২১ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি শাহেদ নুর উদ্দিনের সমন্বিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

আসামিপক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশ্যে আদালত বলেন, কোর্টের আদেশেই বলা হয়নি সাক্ষী রিকলের। সেখানে আপনারা কোর্ট ট্রান্সফারের আবেদন করেছেন। আমরা মনে করি সিআরপিসি ৫২৬ অনুযায়ী আবেদন যথাযথ হয়নি। এরপর আদালত আসামিদের আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেন।

বিচারক পরিবর্তন ও আদালত স্থানান্তর চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করে আসামিপক্ষ। গত ৩ ডিসেম্বর মামলার শুনানিতে বিচারকের প্রতি ‘অনাস্থা’ জানিয়ে সাক্ষীকে জেরা না করেই এজলাস ত্যাগ করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা

এর আগে ১৮ ডিসেম্বর আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার বিচারক পরিবর্তন ও আদালত স্থানান্তর চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করে আসামিপক্ষ। গত ৩ ডিসেম্বর মামলার শুনানিতে বিচারকের প্রতি ‘অনাস্থা’ জানিয়ে সাক্ষীকে জেরা না করেই এজলাস ত্যাগ করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।

ওইদিন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানকে একটি দরখাস্ত দিয়ে কারাগারে আটক ২২ আসামির আইনজীবীরা বলেন, এ আদালতে ‘ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হওয়ায়’ তারা অন্য কোনো আদালতে মামলা স্থানান্তরের জন্য হাইকোর্টে আবেদন করবেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবীদের আবেদনে বলা হয়, রাষ্ট্রপক্ষের ৩১ নম্বর সাক্ষী ডা. সোহেল মাহমুদ সাক্ষ্য দেওয়ার সময় যে জবানবন্দি দিয়েছেন, তা কম্পিউটারে কম্পোজ করা ছিল। তার জবানবন্দি আগেই নথিতে জবানবন্দি হিসেবে সন্নিবেশিত হয়েছে। তাছাড়া আসামিপক্ষের বিভিন্ন সাক্ষীকে জেরার বিষয় হুবহু রেকর্ড করা হয়নি, যা আইনসম্মত নয়।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আবরারকে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে বেদম মারধর করে। এতে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পরদিন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ ১৯ জনকে আসামি করে রাজধানীর চকবাজার থানায় মামলা দায়ের করেন। ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র জমা দেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান। পরে চলতি বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

অভিযোগপত্রভুক্ত ২৫ আসামির মধ্যে ২১ জনকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২১ জনের মধ্যে ১৬ জনের নাম আবরারের বাবার করা হত্যা মামলার এজাহারে রয়েছে। তারা হলেন- মেহেদী হাসান রাসেল, অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মেহেদী হাসান রবিন, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুল ইসলাম, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা ও এ এস এম নাজমুস সাদাত। বাকি পাঁচজনের নাম তদন্তে বেরিয়ে আসে। তারা হলেন- ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত ও এস এম মাহমুদ সেতু।

নিহত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।


টিএইচ/টিএম