মির্জা হোসেইন হায়দার

শেষ কর্মদিবসে বিদায়ী ভাষণে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার আইনাঙ্গনের সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, এমন কিছু যেন আমরা না করি, যাতে সুবিচারের প্রতীক শ্বেতশুভ্র অট্টালিকাটির (সুপ্রিম কোর্ট) গায়ে কালিমা লাগে।

রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) আপিল বিভাগে ভার্চুয়ালি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে তাকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সংবর্ধনায় প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতি ও আইনজীবীরা যুক্ত ছিলেন।

বিদায়ী ভাষণে তিনি বলেন, সাংবিধানিকভাবে বিচার বিভাগ স্বাধীন, কিন্তু বাস্তবে তা কতটুকু, আমরা সকলেই জানি এবং বুঝি। রাষ্ট্রের তিনটি (নির্বাহী, আইন ও বিচার) বিভাগের চৌহদ্দি সংবিধানে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। যেখানে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে থাকার নির্দেশনাও আছে। নিজ নিজ পরিধির মধ্য থেকে কে কতটুকু কাজ করবে তা সংবিধানে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে, যাতে কেউ রেখা অতিক্রম করতে না পারে।

তিনি আরও বলেন, বিচার ব্যবস্থা তার নিজস্ব গতিতেই চলে। শত চেষ্টা চালিয়েও কেউ তার গতি রোধ করতে পারে না, পারবে না। যত বাধা-বিপত্তি কিংবা ঘাত-প্রতিঘাতই আসুক না কেন আমাদের ঐকান্তিক ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় বিচার বিভাগের গতি কেউ রোধ করতে পারবে না।

বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার বলেন, আমি বিশ্বাস করি সবার যৌথ প্রয়াসেই বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা আরও পরিণত ও উন্নত হবে। সমষ্টিগত প্রয়াস ও প্রচেষ্টাই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত। তাই বিচারক থেকে শুরু করে বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত সবারই নিবিড়ভাবে সংযুক্ত হয়ে কাজ করতে হবে। সুবিচার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে বিচারালয়ের সর্বনিম্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা থেকে সর্বোচ্চ পদাধিকারীর ঐক্যবদ্ধ থাকা একান্ত প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন শাস্ত্রে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে আইন পেশায় আত্মনিয়োগ করতে শ্বেতশুভ্র ভবনটিতে প্রবেশ করি। সেই থেকে এই ভবনটিকে আমি আমার দ্বিতীয় বাড়ি হিসেবে গ্রহণ করে নিই। সকাল থেকে সন্ধ্যা, এমনকিই রাত পর্যন্ত এখানে কাজের মধ্য দিয়ে সময় কেটেছে। একপর্যায়ে ২২ বছরের ওকালতি জীবনের ইতি টেনে ২০০১ সালে বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করি। সেদিন থেকেই জীবনের মোড় ঘুরে যায়। সেদিন থেকেই মনে হয়, সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালোবাসিলাম।’

১৯৫৪ সালের ১ মার্চ জন্ম নেওয়া মির্জা হোসেইন হায়দার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগ থেকে এলএলবি ও এলএলএম ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ১৯৭৯ সালে জেলা আদালত, ১৯৮১ সালে হাইকোর্ট বিভাগ ও ১৯৯৯ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন।  ২০০১ সালের ৩ জুলাই তিনি হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি এবং ২০০৩ সালের ৩ জুলাই স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। 

২০১৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের বিচারপতি হন মির্জা হোসেইন হায়দার। সুদীর্ঘ কর্মময় জীবনে তিনি অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, ভুটান, চীন, ফ্রান্স, ভারত, মালয়েশিয়া, নেপাল, ফিলিপাইন, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও উজবেকিস্তান সফর করেছেন।

এমএইচডি/আরএইচ