উচ্চ আদালতে বিচারের রায়ে কোটি টাকার চেক জাল প্রমাণিত হয়েছে। এ চেকের কারণে চেকদাতাদের দেওয়া সাজার রায় বাতিল করে হাইকোর্ট বলেছেন, মামলার নথি থেকে চেকটি দেখলাম। চেকের লেখাগুলো ভিন্ন ভিন্ন কালিতে। যা খালি চোখে স্পষ্টত দেখা যাচ্ছে। যা জাল চেক মর্মে প্রমাণ হয়। এটিকে সৃজিত চেক বলার অপেক্ষা রাখে না।

সোমবার (২৪ অক্টোবর) বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ দেন।

হাজী দেলোয়ার হোসেন বনাম রাষ্ট্র মামলার রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, শ্রম প্রদান ও ব্যবসায়িক কারণে চেক গ্রহীতাকে আসামিরা চেক দিয়েছেন। কিন্তু কিসের শ্রম ও ব্যবসায়িক কারণে চেক দেওয়া হয়েছে সেটা স্পষ্টতই উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া এর সপক্ষে কি সাক্ষ্যপ্রমাণ বাদী আদালতে দাখিল করেছেন সেটার কোনো তথ্য নেই। এ কারণে চেক গ্রহীতা কিসের বিনিময়ে কীভাবে চেকটি পেয়েছেন সেটা সুনির্দিষ্টভাবে মামলার আর্জিতে উল্লেখ না করে থাকে তাহলে বিচারিক আদালত মামলাটি আমলে না নিয়ে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করবেন।

রায়ে হাইকোর্ট বলেন, দেওয়ানি প্রকৃতির মামলায় সবকিছু প্রমাণের দায়িত্ব থাকে বাদীর। সেই কারণে চেক প্রত্যাখ্যানের মামলা যথানিয়মে অভিযোগকারীকেই তার অভিযোগের বিষয়ে প্রমাণ করতে হবে আদালতে। মামলার আর্জিতে যদি চেক বিনিময়ের সুনির্দিষ্ট কোনো বর্ণনা না থাকে তাহলে বিচারিক আদালত সেই আর্জি গ্রহণ করবেন না।

আদালতে হাজী দেলোয়ার হোসেনের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মাসুদ। তিনি বলেন, হাজী দেলোয়ার হোসেনের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন চেক গ্রহীতা। কোনোভাবে একটি চেক পেয়ে উনি তাতে ঘষামাজা করে কোটি টাকা দাবি করে চেক প্রত্যাখ্যানের মামলা করেছেন। হাইকোর্টের রায়ে আজ প্রমাণিত হলো চেকটি জাল ছিল।

নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট অ্যাক্টের ১৩৮ ধারায় আর এফ প্রোর্টিজের মালিক হাজী দেলোয়ার হোসেন ও কামরুল হাসান বাচ্চুকে আসামি করে মামলা করেন চেক গ্রহীতা মো. আমিনুল্লাহ। বাদী ওই প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ম্যানেজার ছিলেন। বাদী মামলায় অভিযোগ করেন, আসামিরা পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য ২০১৪ সালের ২০ এপ্রিল এক কোটি টাকার একটি চেক দেন। চেকটি নগদায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে উপস্থাপন করলে ওই বছরের ২৫ জুন তা প্রত্যাখ্যান হয়। ওই বছরের ১৪ জুলাই ডাকযোগে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। পরে টাকা পরিশোধ না করায় ২৫ আগস্ট মামলা করা হয়।

এই মামলায় ২০১৭ সালের ২১ মে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। পরে সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষে ২০২০ সালের ১ মার্চ দুই আসামিকে এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং চেকে উল্লেখিত টাকার সমপরিমাণ কোটি টাকা জরিমানা করেন চট্টগ্রামের প্রথম যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালত। এই রায়ের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে আপিল করেন আসামিরা। আপিলের রায়ে আদালত বলেন, মামলাটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি। এ কারণে মামলাটি পুনরায় বিচারের জন্য বিচারিক আদালতে পাঠান। এই রায়ের বিরুদ্ধে বাদী রিভিশন মামলা করেন হাইকোর্টে। রিভিশন মামলার রায়ে হাইকোর্ট বাদীর অভিযোগনামা প্রত্যাখ্যানের পাশাপাশি আসামিদের খালাস প্রদান করলেন।

এমএইচডি/এসএসএইচ