যৌতুকের জন্য তমা মির্জাকে মারধর করত হিশাম চিশতী
নায়িকা মির্জা ফারজানা ইয়াসমিন তমার (তমা মির্জা) সঙ্গে ২০১৯ সালের ৭ মে বিয়ে হয় কানাডা প্রবাসী হিশাম চিশতীর। বিয়ের পর তমার কাছে ২০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন তিনি। যৌতুকের জন্য প্রায়ই তমাকে মারধর করত তার স্বামী হিশাম। তমার সুখের কথা চিন্তা করে হিশামকে ১০ লাখ টাকা দেন তমার বাবা-মা। দাবিকৃত বাকি আরও ১০ লাখ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ক্ষিপ্ত হয়ে তমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে কিল-ঘুষি মারেন হিশাম। তমার চিৎকারে পাশের রুম থেকে তার বাবা-মা এলে তাদেরও এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মারেন হিশাম চিশতী।
সম্প্রতি ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তমা মির্জার মামলায় তার সাবেক স্বামী হিশাম চিশতীর বিরুদ্ধে যৌতুকের জন্য নির্যাতন ও মারধরের ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাড্ডা থানার উপ-পরিদর্শক সৌমিত্র সাহা। মামলার অভিযোগপত্রে এসব কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। মামলার আসামি হিশাম চিশতী পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, হুলিয়া ও সম্পত্তি ক্রোকের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
বিজ্ঞাপন
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, আসামি হিশাম চিশতী ঘটনার দেড় বছর আগে তমা মির্জাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে হিশাম চিশতী যৌতুকের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে তমা মির্জাকে মারধর করেছে। দাম্পত্য জীবনে হিশামের সঙ্গে তমার সাংসারিক বিষয় নিয়া মাঝে মধ্যে ঝগড়া হতো। হিশাম কারণে-অকারণে তমার গায়ে হাত তোলে এবং ব্যবসার জন্য তমার বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক হিসেবে ২০ লাখ টাকা এনে দিতে বলেন। তমার সুখের কথা চিন্তা করে তার বাবা-মা বিভিন্ন সময়ে হিশামকে ১০ লাখ টাকা দেন।
কিছুদিন পর হিশাম যৌতুকের বাকি ১০ লাখ টাকার জন্য পুনরায় তমাকে মারধর করতে থাকে। একসময় হিশামের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তমা বাড্ডায় তার বাবার বাড়িতে চলে আসেন। ২০২০ সালের ৫ ডিসেম্বর হিশাম ক্ষিপ্ত হয়ে তমার বাবার বাড়ি আসেন। এরপর তমার বাবার কাছ থেকে যৌতুকের বাকি ১০ লাখ টাকা এনে দিতে বলেন। তমা আসামি হিশামের দাবিকৃত যৌতুকের টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এতে হিশাম ক্ষিপ্ত হয়ে তমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে কিল-ঘুষি মারেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করেন, তমার চিৎকারে পাশের রুম থেকে তার বাবা-মা এলে হিশাম তাদেরও এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মারেন। এসময় ঘরে থাকা ফুলদানি দিয়ে তমার মায়ের পিঠে ও মাথায় এবং তমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করেন হিশাম। যার ফলে তমাসহ তার মা আহত হয়। এরপর হিশাম মামলার বাদী তমাসহ তার বাবা-মাকে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে চলে যায়।
বিজ্ঞাপন
তদন্তকালে প্রাপ্ত তথ্য, সাক্ষ্য প্রমাণ, ঘটনার পরিপার্শ্বিকতায় মেডিকেল সনদ পর্যালোচনায় আসামি হিশামের বিরুদ্ধে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী ২০০৩ এর ১১(গ) তৎসহ দণ্ডবিধির ৩২৩/৫০৬ ধারার অপরাধ প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রতীয়মান হয়েছে। তাই আসামি হিশাম চিশতীর বিরুদ্ধে ২০০৩ এর ১১(গ) তৎসহ পেনাল কোডের ৩২৩/৫০৬ ধারায় চার্জশিট দাখিল করা হলো।
আরও পড়ুন : নায়িকা তমা মির্জাকে মারধর : স্বামী হিশামের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র
হিশাম চিশতীর মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন তমা মির্জা
তমা মির্জাসহ চার জনকে তার স্বামী হিশাম চিশতীর করা হত্যাচেষ্টা মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। মামলা প্রমাণের জন্য কোনো সাক্ষী উপস্থাপন না করায় তাদের অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করে সম্প্রতি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাড্ডা থানার উপ-পরিদর্শক সৌমিত্র সাহা। আদালত পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে মামলার থেকে তমা মির্জাসহ চার জনকে অব্যাহতি দেন। অব্যাহতি পাওয়া অপর তিন জন হলেন— তমা মির্জার বাবা মির্জা আবু জাফর, তমার মা ফাতেমা বেগম এবং ওয়াশিম।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, আসামি তমা মির্জা, তার মা ফাতেমা বেগম, বাবা মির্জা আবু জাফর ও ওয়াশিমের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩২৩ ধারার অধর্তব্য (ছোট অপরাধ, যা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ছাড়া আসামিকে গ্রেপ্তার করা যায় না) অপরাধ প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। তবে হিশাম চিশতীর আনা অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩২৪/৩২৫/৩০৭/১০৯ ধারায় অপরাধের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। হিশাম চিশতী কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ হাজির করতে পারেননি। মামলার করার পর বাদী হিশাম চিশতী কানাডা চলে যাওয়ায় কোনো সাক্ষী উপস্থাপন না করায় আসামি তমা মির্জাসহ চার জনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন দাখিলের আবেদন করা গেল না। তাই মামলার দায় থেকে আসামিদের অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হলো।
দুটি মামলার তদন্ত করেছেন বাড্ডা থানার উপ-পরিদর্শক সৌমিত্র সাহা। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, তমা মির্জা তার সাবেক স্বামী হিশাম চিশতীর বিরুদ্ধে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগে যে মামলাটি করেছেন তার প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেছে। তাই আসামি হিশাম চিশতীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি। তিনি পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছি। তমা মির্জাসহ চারজনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে হিশাম চিশতী যে মামলাটি করেছেন সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থিত না করায় তাদের অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেছি।
এ বিষয়ে বাড্ডা থানার (না.শি) আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মাহফুজ বলেন, গত ১৮ অক্টোবর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাড্ডা থানার উপ-পরিদর্শক সৌমিত্র সাহা আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ৭ নভেম্বর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত অভিযোগপত্র দেখিলাম বলে বিচারের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বদলির আদেশ দেন।
বাড্ডা থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা রনপ কুমার বিশ্বাস বলেন, গত ২৯ মে তমা মির্জাসহ চার জনকে অব্যাহতি দিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। ৮ জুন আদালত প্রতিবেদনটি গ্রহণ করে তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৫ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর বাড্ডা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং যৌতুকের জন্য মারধরসহ হুমকি দেওয়ার অভিযোগে হিশাম চিশতীর বিরুদ্ধে মামলা করেন তমা মির্জা।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, দেড় বছর আগে চিত্রনায়িকা মির্জা ফারজানা ইয়াসমিন তমার (তমা মির্জা) সঙ্গে বিয়ে হয় কানাডা প্রবাসী হিশাম চিশতীর। বিয়ের পরে তমা মির্জাকে অকারণে মারধর করতেন হিশাম। ব্যবসার জন্য শ্বশুরবাড়ির লোকজন তমার বাবার কাছ থেকে যৌতুক হিসেবে ২০ লাখ টাকা এনে দিতে বলেন। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে তমার বাবা-মা হিশামকে বিভিন্ন সময় ১০ লাখ টাকা দেন। এর কিছুদিন পর হিশাম আবারও তমাকে মারধর করেন। অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তমা বাবার বাড়িতে চলে আসেন।
মামলার অভিযোগে তমা আরও বলেন, ২০২০ সালের ৫ ডিসেম্বর রাত ৩টার দিকে হিশাম আমার বাসায় আসে। আমাকে মারধর করলে চিৎকার শুনে পাশের রুম থেকে আমার বাবা-মা এলে হিশাম তাদেরও মারধর করে। ঘরে থাকা ফুলদানি দিয়ে আমার মায়ের পিঠে ও মাথায় এবং আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। যার ফলে আমার বাবা-মাসহ আমি আহত হই।
এরপর হিশাম আমাকেসহ আমার বাবা-মাকে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়। সে আমাদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তার কাছে থাকা আমার ব্যক্তিগত মুহূর্তের অনেক ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশেরও হুমকি দেয়।
২০১৯ সালের ৭ মে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক হিশাম চিশতীকে বিয়ে করেন তমা মির্জা। বর্তমানে তমা মির্জা দেশে থাকলেও হিশাম চিশতী থাকছেন কানাডায়।
এনআর/এসএসএইচ