সড়কের দুইপাশের অর্ধশত তালগাছে অভিনব কায়দায় কীটনাশক প্রয়োগের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছেন রাজশাহীর বাগমারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমিনুল ইসলাম। 

প্রাথমিক তদন্তের অগ্রগতি জানিয়ে ওসির দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মো. শাহরিয়ার (স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা) নিজের রোপণ করা আমগাছের বেড়ে ওঠার প্রতিবন্ধকতা দূর করতে তালগাছগুলোতে ক্ষত সৃষ্টি করে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে নিধনের অপচেষ্টা করেছেন। তালগাছগুলোর ক্ষতি করার পেছনে তার ব্যক্তিগত স্বার্থ রয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে শাহরিয়ারের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে বলে মনে প্রতীয়মান হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিষ প্রয়োগের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানিয়ে বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের বেঞ্চে  প্রতিবেদন দেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৩০ জানুয়ারি বাগমারা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এ এফ এম আবু সুফিয়ানের কাছ থেকে এ বিষয়ে চিঠি পান। এর পরই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. রেজাউল ইসলাম সরেজমিনে গিয়ে ঘটনার প্রাথমিকভাবে সত্যতা যাচাই করে তা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উপজেলা প্রকৌশলীকে মৌখিকভাবে জানান। 

তারই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২ ফেব্রুয়ারি উপজেলা প্রকৌশলী মো. খলিলুর রহমানের আবেদনে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। পরে দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তা রেজাউল ইসলাম জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের অনুমতি নিয়ে তদন্ত শুরু করেন। এরইমধ্যে আলামত, তথ্য সংগ্রহ ও সাক্ষীদের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনের ওপর শুনানির পর আদালত আগামী ৪ এপ্রিল পরবর্তী আদেশের জন্য রেখে এ সময়ের মধ্যে ওসিকে ফের প্রতিবেদন দিতে বলেন। সেদিন ওসি আমিনুল ইসলাম ও অভিযুক্ত শাহরিয়ার আলমকেও আদালতে থাকতে বলা হয়েছে।

আদালতে শাহরিয়ার আলমের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. জাহিদুল হক জাহিদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনী। আর এ নিয়ে প্রতিবেদন করা সাংবাদিক ও সংশ্লিষ্ট পত্রিকার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার।

গত ২৭ জানুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজশাহীর বাগমারায় উপজেলার সড়কের বাইগাছা এলাকায় নিজের পুকুরপাড়ে আমগাছ লাগিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা শাহরিয়ার আলম। পুকুরটি মূলত মাথাভাঙ্গা-হাটগাঙ্গোপাড়া সড়কঘেঁষা। ওই সড়কের পাশে আগে থেকেই তালগাছ লাগানো ছিল। এসব তালগাছের ছায়ার কারণে শাহরিয়ারের লাগানো আমগাছগুলো ঠিকমতো বেড়ে উঠছে না।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, নিজের গাছগুলো দ্রুত বড় করে তোলার জন্য তালগাছের বাকল তুলে সেখানে কীটনাশক প্রয়োগ করেছেন শাহরিয়ার আলম। এতে সড়কের পাশে থাকা অন্তত ৫০টি তালগাছ মরে যাচ্ছে।

অভিযুক্ত শাহরিয়ার আলম বাগমারা উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও করখণ্ড দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ধারালো কোনো অস্ত্র দিয়ে গাছের বাকল তুলে ফেলা হয়েছে। এরপর ওই স্থানে কীটনাশক জাতীয় তরল কিছু প্রয়োগ করা হয়েছে। শাহরিয়ার আলম প্রভাবশালী হওয়ায় প্রকাশ্যে কোনো প্রতিবাদ করেনি স্থানীয়রা। এর আগে তার বিরুদ্ধে সড়কের পাশে পুকুর খননের প্রতিবাদ করে অনেকে হয়রানির শিকার হয়েছেন।

এক দশক আগে স্থানীয় এক বৃদ্ধসহ কয়েকজন সড়কের দুই পাশে প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তালবীজ লাগিয়েছিলেন। তাদের নিয়মিত দেখভালে বেড়ে উঠছিল তালগাছগুলো।

এ প্রতিবেদন দেখে গত ১ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শাহরিয়ার আলমকে তলব করেন হাইকোর্ট। এছাড়া বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কৃষি কর্মকর্তাকে যৌথভাবে ঘটনার সরেজমিন তদন্তের নির্দেশ দিয়ে সাতদিনের মধ্যে কীটনাশক প্রয়োগ করা তালগাছগুলোর ছবিসহ প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়।

অর্ধশতাধিক তালগাছে কীটনাশক প্রয়োগের জন্য শাহরিয়ারের কাছ থেকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ আদায় ও তার বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি সে তলবে হাজির হয়ে তালগাছে কীটনাশক প্রয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করেন শাহরিয়ার। এ সময় বাগমারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক তার সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদন ছবিসহ দাখিল করেন। সেদিন আদালত এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে বাগমারা থানার ওসিকে হাজির হতে বলেন। এ নির্দেশেই বৃহস্পতিবার আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন বাঘমারা থানার ওসি।

এমএইচডি/কেএ