যুক্তরাষ্ট্রে তিনতলা বাড়ি
এসকে সিনহা ও তার ভাইয়ের ব্যাংক হিসাব-বাড়ি জব্দের আদেশ
ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ অর্জন ও যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ির সন্ধান পাওয়ায় দুদকের মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা ও তার ভাই অনন্ত কুমার সিনহার যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও বাড়ি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুদকের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এসকে সিনহা ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় বিদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও বাড়ি জব্দের আবেদন করা হয়েছিল। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে তাদের তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও বাড়ি জব্দ করার আদেশ দিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
গত ২০ ফেব্রুয়ারি এসকে সিনহা ও তার ভাইয়ের যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও বাড়ি জব্দ চেয়ে আদালতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। এ আবেদনের ওপর দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল শুনানি করেন। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান এ আদেশ দেন।
পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, জব্দের আদেশটি কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আদেশটি ইংরেজিতে লিখে বিদেশে পাঠানো হবে। সেখানে ইন্টারপোল, এফবিআই বা অন্য কোনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহযোগিতা নেওয়া হবে।
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে তিনতলা বাড়ির সন্ধান পাওয়ায় গত বছরের ৩১ মার্চ এসকে সিনহা ও তার ভাই অনন্ত কুমার সিনহার বিরুদ্ধে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলা করেন সংস্থাটির উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। মামলায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে অভিযোগ আনা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১২ জুন যুক্তরাষ্ট্রে এসকে সিনহার জন্য তিনতলা একটি বাড়ি কেনেন তার ভাই অনন্ত কুমার। যার দাম দুই লাখ ৮০ হাজার ডলার, ৮৬ টাকা ডলার ধরলে বাংলাদেশি মুদ্রায় যা দাঁড়ায় দুই কোটি ৪০ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
এই বাড়ি কেনার আগে ৩০ বছরের কিস্তিতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছ থেকে নিজের জন্য এক লাখ ৮০ হাজার ডলার ব্যাংক ঋণ নিয়ে আরও একটি বাড়ি কিনেছিলেন অনন্ত কুমার সিনহা। পেশায় দন্ত চিকিৎসক অনন্ত প্রথম বাড়িটি কিস্তিতে কিনলেও নিজের ভাইয়ের জন্য নগদ টাকায় বাড়ি কেনেন।
মামলার বিবরণে আরও জানা যায়, ২০১৮ সালের ৫ মার্চ থেকে ২৮ মে পর্যন্ত অনন্ত কুমার সিনহার নিউ জার্সির প্যাটারসনে অবস্থিত ভ্যালি ন্যাশনাল ব্যাংকের একটি হিসাবে ৬০ হাজার ডলার জমা হয়। ওই একই হিসাবে অন্য একটি উৎস থেকে একই বছরের ১১ এপ্রিল থেকে ২০ জুন পর্যন্ত এক লাখ ৯৬ হাজার ৪৫৮ ডলার জমা হয়। এসকে সিনহার বাড়ি কেনার বা বিদেশে অর্থপাচারের বৈধ কোনো উৎসের সন্ধান পায়নি সংস্থাটি।
দুদক সংশ্লিষ্ট সূত্র মনে করে, এসকে সিনহা বিভিন্ন সময়ে ঘুষ হিসেবে যেসব টাকা গ্রহণ করেছেন তা বিদেশে পাচার করেন। দুদক তার বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে অভিযোগ আনে।
এছাড়া সাবেক ফারমার্স ব্যাংক বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক থেকে চার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি ও অর্থপাচারের মামলায় আলাদাভাবে এসকে সিনহাকে চার বছর এবং সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
এনআর/জেডএস