প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে সমাবেশস্থলে বোমা রাখার অভিযোগে দায়ের করা মামলার ১৪ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। 

রায় ঘোষণা শেষে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী স্পেশাল পিপি আবু আবদুল্লাহ ভুইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রপক্ষ রায়ে সন্তুষ্ট। তবে আসামিদের আইনগত অধিকার রয়েছে। তারা চাইলে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল, রিভিউ ও রিভিশন করতে পারেন।’

এদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবীদের রায়ে প্রতিক্রিয়া জানতে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) দুপুরে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালত ১৪ আসামির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। 

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৪ আসামিরা হলেন- মো. আজিজুল হক ওরফে শাহনেওয়াজ, মো. লোকমান, মো. ইউসুফ ওরফে মোছহাব মোড়ল, মোছহাব হাসান ওরফে রাশু, শেখ মো. এনামুল হক, মো. মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ, মো. মাহমুদ আজহার ওরফে মামুনুর রশিদ, মো. রাশেদুজ্জামান ওরফে শিমুল, মো. তারেক, মো. ওয়াদুদ শেখ ওরফে গাজী খান, মো. আনিসুল ইসলাম ও সারোয়ার হোসেন মিয়া, মাওলানা আমিরুল ইসলাম ওরফে জেন্নাত মুন্সী ও মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান।

এর মধ্যে আজিজুল হক, লোকমান, মো. ইউসুফ, শেখ মো. এনামুল হক, মোছাহেব হাসান- পাঁচ আসামি পলাতক রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

এ ছাড়া এ মামলায় মাওলানা আমিরুল ইসলাম ওরফে জেন্নাত মুন্সী ও মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান জামিনে ছিলেন। রায় ঘোষণার সময় অন্য সাত আসামির সঙ্গে তারাও আদালতে হাজির ছিলেন।

২০০০ সালের ২১ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় সমাবেশস্থলে ৭৬ কেজি ওজনের ওই বোমা রাখা অভিযোগে দায়ের করা মামলায় এ রায় ঘোষণা করে আদালত। রায় ঘোষণা উপলক্ষে মঙ্গলবার সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। পরে তাদের আদালতের হাজতখানায় রাখা হয় বলে ঢাকা পোস্টকে জানান হাজতখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মইনুল ইসলাম। এরপর বেলা ১২টা ১৫ মিনিটে আসামিদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। ১২টা ২০ মিনিটে এজলাসে হাজির হন বিচারক। এরপর বিচারকের নির্দেশে মামলার রায় পড়া শুরু করেন সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের স্টোনোগ্রাফার।

এর আগে গত ১১ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য আজ এ দিন ধার্য করেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান।

৭৬ কেজি ওজনের বোমা
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০০ সালের ২১ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ কলেজ মাঠে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশস্থলের পাশ থেকে ৭৬ কেজি ওজনের একটি বোমা উদ্ধার করা হয়। সেখানে পরের দিন শেখ হাসিনার সেই সমাবেশে বক্তব্য রাখার কথা ছিল। 

এ ঘটনায় হত্যাচেষ্টা, বিস্ফোরক দ্রব্য ও হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তিনটি মামলা হয়। এরই মধ্যে ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট বিচারিক আদালত হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় রায় দেন। রায়ে ১০ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড এবং ১৩ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন আদালত।

হত্যাচেষ্টা মামলায় আপিলের রায়ও হয়েছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত রায়ে ১০ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামি ও ১৪ বছর দণ্ডিত দুই আসামির সাজাও বহাল রাখা হয়েছে। ১৪ বছর দণ্ডিত অপর এক আসামিকে খালাস দিয়েছেন উচ্চ আদালত।

কোটালীপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নূর হোসেন বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলাটি দায়ের করেন। এরপর ২০০১ সালের ১৫ নভেম্বর সিআইডির সাবেক এএসপি আব্দুল কাহার আকন্দ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। বিচার চলাকালে বিভিন্ন সময়ে আদালত মোট ৫০ সাক্ষীর মধ্যে ৩৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।

টিএইচ/এসএম