গণমাধ্যমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার ও প্রকাশে নিষেধাজ্ঞার রুল শুনানিতে বিএনপির আইনজীবীরা বলেছেন, তারেক রহমান গত ১৫ বছর ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন। যে ঠিকানায় নোটিশ জারি করা হয়েছে সেটা বিএনপির পার্টি অফিস। সঠিক ঠিকানায় নোটিশ জারি না হওয়া পর্যন্ত রুল শুনানি করা ঠিক নয়। রাজনৈতিক দলের নেতার কণ্ঠা রোধ করতেই কোর্টকে ব্যবহার করতে চাচ্ছে বাদীপক্ষ।

তারা বলেন, এটা একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যা হচ্ছে তা অন্যায্য এবং তা দৃশ্যমান। সবকিছুরই ইতিহাস থেকে যায়। আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে যেন কেউ কোন স্বার্থ হাসিল করতে না পারে, কণ্ঠরোধ না করতে পারে সেদিকে কোর্টেরও লক্ষ্য রাখা উচিত।

মঙ্গলবার বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের  হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানিতে বিএনপির আইনজীবীরা এসব কথা বলেন।

এক পর্যায়ে আদালত বলেন, দেওয়ানি কার্যবিধি ও হাইকোর্ট রুলস অনুসরণ করেই আমরা আদেশ দিয়েছি। আমাদের জানামতে আদেশ ঠিক আছে। বাদী পক্ষ এসেছে আর আমরা আদেশ দিয়েছি তা তো করিনি। আইন অনুসরণ করেই রুল শুনানির দিন ধার্যের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

রুল শুনানির দিন ধার্যের পর বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, এটা একটা রিট মামলা। এই মামলায় তারেক রহমান পলাতক নন। একজন ব্যক্তি হিসাবে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ যেতে পারে না।

ব্যারিস্টার এম মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, যেনতেনভাবে নোটিশ জারি করলে হবে না, সঠিক ঠিকানায় নোটিশ জারি করতে হবে। যে ঠিকানার (৬ মইনুল রোড) কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেটা তো সরকারের জায়গা। সেখানে এখন বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। হাইকমিশনের মাধ্যমে তার ঠিকানা জেনে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে বাদীর।

তিনি বলেন, যিনি বাদী পক্ষের আইনজীবী তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। এই কোর্টকেই কেন উনি বেছে নিলেন? 

এ পর্যায়ে আদালত বলেন, এখানে হাইকমিশনের বিষয় কেন আসছে। 

আইনজীবী বলেন, সঠিক ঠিকানা জানতে।

ব্যারিস্টার এম. বদরুদ্দোজা বাদল বলেন, তারেক রহমান দেশের বাইরে আছেন তাই নোটিশ সঠিকভাবে জারি হয়নি। যিনি এই মামলার বাদী তার দায়িত্বও বিবাদীর সঠিক ঠিকানা সংগ্রহ করা। যেহেতু বিবাদী বিদেশে সেহেতু হাইকমিশনের মাধ্যমে ঠিকানা সংগ্রহ করার দায়িত্ব বাদীর। শূন্যের উপর আদালত কোন আদেশ দিতে পারে না।

এ পর্যায়ে আদালত বলেন, আমরা যতটা দেখেছি আইন অনুযায়ী নোটিশ জারি হয়েছে। বাদী যেটা জানে তার বাইরে তো যাওয়ার সুযোগ নেই।

শুনানি শেষে আদালত গণমাধ্যমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার ও প্রকাশে নিষেধাজ্ঞার প্রশ্নে জারিকৃত রুল শুনানির জন্য কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্তির নির্দেশ দেন।

উল্লেখ্য, এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি তারেক রহমানের বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে রুল জারি করা হয়। রুলে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রকাশ ও প্রচার নিষিদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কেন বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

ওই রুল শুনানির জন্য আট বছর পর হাইকোর্টে আবেদন জানায় রিটকারী পক্ষ। কিন্তু তারেক রহমানের ঠিকানা ভুল থাকায় নোটিশ সঠিকভাবে জারি হয়নি। এ কারণে ঠিকানা সংশোধন করে ফের আবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ওই নির্দেশনা মোতাবেক তারেক রহমানের ঠিকানা সংশোধন করে নোটিশ জারির নির্দেশ দেন আদালত। এরপরই গত সপ্তাহে নোটিশ জারি করা হয়।

গতকাল নোটিশ জারির বিষয়টি প্রতিবেদন আকারে আদালতকে জানানো হয়। এ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্যকে কেন্দ্র করে আওয়ামী ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা হট্টগোল করেন। পরে কোর্টের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।  

এমএইচডি/এসকেডি