দুই বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখতে আল্টিমেটাম
১৫ আগস্টের শোক দিবসের আলোচনা সভায় ‘বিচারপতিরা শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ উল্লেখ করে বক্তব্য দেওয়ায় আপিল বিভাগের দুইজন বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখতে প্রধান বিচারপতির কাছে দাবি জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।
এছাড়া ওই দুজন বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে বিরত না রাখলে ৪৮ ঘন্টা পর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
রোববার (২৭ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
বিজ্ঞাপন
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বিচারপতিদের বক্তব্য বিচারপতি হিসেবে নেয়া শপথের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সাধারণত কোনো রাজনৈতিক কর্মী যে ভাষায় তার দলীয় বক্তব্য প্রদান করেন, অনেক মাননীয় বিচারপতির বক্তব্যে তেমন একজন রাজনীতিবীদের বক্তব্যের প্রতিফলন আমরা লক্ষ্য করেছি। তাদের এই বক্তব্য কোনো বিচারেই বিচারক সুলভ নয়। যারা মানসিকভাবে নিজেদের রাজনীতিবিদ বলে বিবেচনা করেন সেই সমস্ত বিচারকদের মাধ্যমে অতীতে কতটুকু ন্যায়বিচার সম্পন্ন হয়েছে তা সহজেই অনুমেয়। ভবিষ্যতেও তারা বিচারিক কার্য পরিচালনা করলে কি ধরণের বিচার করবেন তা বলাই বাহুল্য। এক্ষেত্রে আমরা মনে করি, সুপ্রীম কোর্ট তথা বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক প্রধান হিসাবে মাননীয় প্রধান বিচারপতি মূখ্য ভূমিকা পালন করতে পারেন।
ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সঙ্গে তৎকালীন আপিল বিভাগের বিচারপতিগণ একত্রে বিচার কাজ পরিচালনার অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন। যার প্রেক্ষিতে বর্তমান বিনা ভোটের সরকারের রোষানলে পড়ে বিচারপতি সিনহা দেশত্যাগ ও পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। আমরা মনে করি, আপিল বিভাগের দুজন বিচারপতি যেহেতু শপথ ভঙ্গের মাধ্যমে বিচার কাজ পরিচালনার আইনি ও নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন, তাই প্রধান বিচারপতি তাদেরকে বিচারিক কাজ থেকে বিরত রাখতে পারেন।
বর্তমানে কথিত অজানা অভিযোগে হাইকোর্ট বিভাগের তিন জন বিচারপতিকে বিচারকার্য থেকে প্রায় পাঁচ বছরের অধিক সময় বিরত রাখা হয়েছে।
গত ১৫ আগস্ট আপিল বিভাগের দুজন বিচারপতির প্রদত্ত বক্তব্য নৈতিকতার প্রশ্নে কোনো অংশেই কম নয়। তাদের বক্তব্য সরাসরি সংবিধান প্রদত্ত শপথ ভঙ্গের দৃষ্টান্ত। কাজেই তাদেরকে হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন বিচারপতির ন্যায় বিচারিক কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য আমরা প্রধান বিচারপতির প্রতি বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। নয়তো আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর আমরা তাদের পদত্যাগের দাবিতে নতুন কর্মসূচি পালন করবো।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন। বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উ্দ্দিন খোকন,ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিমকোর্ট শাখার সাধারণ সম্পদক কামরুল ইসলাম সজলসহ বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।
এর আগে গত ১৫ আগস্ট শোক দিবসের আলোচনা সভায় ‘বিচারপতি শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ উল্লেখ করে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, ‘এ সংবিধান হলো আমাদের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক দলিল। বঙ্গবন্ধুর যে রাষ্ট্র-দর্শন, রাজনৈতিক দর্শন, সামাজিক দর্শন—সব দর্শনের প্রতিফলন ঘটেছে এই সংবিধানে।’
তিনি বলেন, ‘ইদানিং সুষ্ঠু নির্বাচন, বিদেশি প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত—এসব নিয়ে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, গণতন্ত্র চাই। বঙ্গবন্ধুর শোষিতের গণতন্ত্র কী? শুধু ভোট দেওয়াই একমাত্র গণতন্ত্র নয়। ভোট দিয়ে রাজা ও মন্ত্রীর পরিবর্তনই গণতন্ত্র নয়। যে গণতন্ত্র মানুষের ভাতের নিশ্চয়তা, বেকারের চাকরির সংস্থান ও দেশের মানুষের সার্বিক মুক্তি ঘটাতে না পারে—বঙ্গবন্ধু সে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন না।’
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এমন হওয়া উচিত হবে না, যে ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে এ দেশের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির উন্মেষ ঘটে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এমন হবে না, শুধু ভোট দিয়েই এখানে জঙ্গিবাদের উত্থান হবে। সংবিধান রক্ষার যে শপথ নিয়েছি, সে অবস্থায় থেকে মুক্তিযুদ্ধের আবহ ও প্রেক্ষাপট, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ সবকিছু মাথায় নিয়ে বিচারিক দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী বলেন, সারা পৃথিবীতে নির্বাচন হয় কেউ তাকিয়েও দেখেনা, নির্বাচন ঘিরে সব নজর বাংলাদেশের দিকে কেন?
এমএইচডি/এমএসএ