হাইকোর্টে হট্টগোল : যা বললেন বিএনপির আইনজীবীরা
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাম্প্রতিক সব বক্তব্য অনলাইন থেকে সরানোর নির্দেশ দেওয়াকে কেন্দ্র করে হাইকোর্টে হট্টগোলের ঘটনা ‘অস্বীকার’ করেছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। তাদের দাবি, আদালতে শান্তিপূর্ণভাবেই অপেক্ষা করছিলেন তারা। এরপর হঠাৎ করেই এজলাস থেকে নেমে চলে গেছেন বিচারপতিরা। এরপর দুপুর ১টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন তারা। এরপর জানতে পারেন বিচারক আর আদালতে বসবেন না।
সোমবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে আদালত প্রাঙ্গণে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন বিএনপির আইন সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
বিজ্ঞাপন
আদালতে বিচারপতির ওপর কজলিস্ট বা ফাইল ছুড়ে মারার অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, আওয়ামীপন্থি আইনজীবী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ফাইল ছুড়ে মারার যে অভিযোগ করেছেন তা সম্পূর্ণ বানোয়াট। তিনি না জেনেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই অভিযোগ করেছেন, কারণ তখন তিনি আদালতে ছিলেন না। অন্তিম মুহূর্তে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম রিট পিটিশনটি নিয়ে গেছেন। এতে করে আপনারা সহজেই বুঝতে পারেন কেন তিনি এ রিট পিটিশন নিয়ে গেছেন। তারা জানেন তারেক রহমানের বক্তব্য দেশের কোটি কোটি মানুষকে অনুপ্রাণিত করছে। বর্তমানে গণতন্ত্রপন্থি মুক্তিকামী মানুষের আন্দোলনের স্পৃহাকে তারেক রহমানের বক্তব্য শানিত করছে। এজন্য তিনি যেন তার বক্তব্য প্রচার করতে না পারেন সেই ব্যবস্থাই করছেন আদালত।
আরও পড়ুন>>‘৩০ সেকেন্ডে অর্ডার, আপনি পক্ষপাতদুষ্ট বিচারক’
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, ২০১৫ সালে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একটি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছিল। এই রিট পিটিশন হঠাৎ করে আমরা হাইকোর্টের কার্যতালিকায় দেখলাম। যেহেতু এটা পিআইএল (পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন) ছিল, তাই আমাদের লিগ্যাল প্রসিডিউর অনুযায়ী পিআইএলের পার্টি হওয়ার জন্য আমরা আদালতে আবেদন করলাম। এর আগে আমরা কোর্ট পর্যবেক্ষণ করলাম, একটি রিট পিটিশনে যে প্রসিডিউর মেইনটেইন করা উচিত, এই পিটিশনে কোন প্রসিডিউর মেইনটেইন করা হয়নি। বিষয়টি যখন আমরা আদালতের নজরে আনলাম, আদালতই তখন আমাদের বললেন আগে পার্টি হয়ে আসুন।
বিএনপিপন্থি এই আইনজীবী বলেন, আমরা যথারীতি পার্টি হওয়ার জন্য আবেদন করলাম, কিন্তু আমাদের আবেদনটি দুঃখজনকভাবে রিজেক্ট করা হয়েছে। যদিও এটা নজিরবিহীন। আমরা এই রিজেক্টের বিরুদ্ধে চেম্বার আদালতে গেলাম। এরপর চেম্বার আদালতের অনুমতি নিয়ে পিটিশনটি পেন্ডিং রয়েছে। এর মধ্যে গত কয়েকদিন আদালতের যে কার্যক্রম আমরা অবজার্ভ করছিলাম, আমাদের কাছে মনে হয়েছে ওই আদালতের প্রিসাইডিং জজ জাস্টিস খসরুজ্জামান পলিটিক্যালি বায়াসড। অর্থাৎ পক্ষপাতিত্বমূলকভাবে তিনি মামলাটি শুনানি করছেন। তাই আমরা চিফ জাস্টিসের কাছে অফিশিয়ালি একটি দরখাস্ত দিলাম যে তিনি বায়াসড। আমরা সেই দরখাস্তে উল্লেখ করেছি ন্যায়বিচারের স্বার্থে আদালতে যে মামলাটি পেন্ডিং রয়েছে, সে আদালত থেকে মামলাটি অন্য একটি আদালতে স্থানান্তর করা হোক।
তিনি বলেন, আমাদের পিটিশনটির ব্যাপারে চিফ জাস্টিস কার্যকরী পদক্ষেপ নিবেন বলে আমরা আশা করছি। এর মধ্যে আজ সকালে দেখলাম এই রিপিটেশনটি একটি অ্যাপ্লিকেশন আকারে এসেছে। আমরা চেয়েছিলাম আমাদের কোর্ট স্থানান্তরের আবেদনটি নিষ্পত্তি হওয়ার পর যেন মামলাটি শুনানি করা হয়। এর মধ্যেই প্রিজাইডিং জজ বলে বসলেন, অলরেডি অর্ডার পাস হয়ে গেছে। আমরা কখন বললাম, আপনার বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক অভিযোগ এনে চিফ জাস্টিস বরাবর অ্যাপ্লিকেশন দেওয়া হয়েছে? সেটি নিষ্পত্তি হলে আপনি মামলার শুনানি করবেন, এর আগে শুনানি সমীচীন হবে না। এর মধ্যেই বিচারপতিরা এজলাস ছেড়ে খাস কামরায় চলে যান।
আরও পড়ুন>>সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর এজলাসে ফিরলেন দুই বিচারপতি
এর আগে সকালে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত রুলে সম্পূরক আবেদনের শুনানি হয়। আইনজীবী কামরুল ইসলাম, সানজিদা খানম, অ্যাডভোকেট নাসরিন সিদ্দিকা লিনা এ আবেদন করেছেন। শুনানি শেষে তারেক রহমানের সাম্প্রতিক দেওয়া সব বক্তব্য অনলাইন থেকে সরানোর জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
অন্যদিকে হাইকোর্টের এই বেঞ্চের বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতির কাছে অনাস্থা জানিয়েছেন বিএনপির আইনজীবীরা।
এরপর কোর্ট চলাকালে তারেক রহমানের সাম্প্রতিক সব বক্তব্য অনলাইন থেকে সরানোর নির্দেশ দেওয়াকে কেন্দ্র করে হাইকোর্টের এজলাস কক্ষে বিএনপিপন্থি ও আওয়ামীপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে টানা ৩০ মিনিটের মতো হইচই ও হট্টগোলের ঘটনা ঘটে।
বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ ঘটনা ঘটে। এসময় কোর্টে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে এজলাস ছেড়ে খাস কামরায় চলে যান বিচারপতিরা। তারা চলে যাওয়ার সময় শেইম-শেইম বলে চিৎকার করতে থাকেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।
টিআই/কেএ