জর্ডানের নাগরিক গালফ এয়ারের পাইলট মোহান্নাদ ইউসুফ হাসান আল হিন্দির মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তদন্তে সহায়তা করতে কো-পাইলট খালিল আবদুল রাজাককে পিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। 

মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) বাদীপক্ষের আইনজীবী মহুয়া মোর্শেদ বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করে বলেন, গতকাল এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরফাতুল রাকিবের আদালত এ আদেশ দেন। 

তিনি জানান, পিবিআই বেশ কয়েকবার অনুরোধ করার পরও গালফ এয়ার তদন্ত কাজে সাড়া দেয়নি। এজন্য মামলার তদন্তকারী ও ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে আদালত গালফ এয়ারের প্রতিনিধিত্বকারী ঈশা শাহের কাছে পিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মামলার মূল সাক্ষী কো-পাইলট খালিল আবদুল রাজাককে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন।  

ভুক্তভোগীর বোন তালা এলহেনডি দাবি করেন, গালফ এয়ারের অবহেলার কারণে তার ভাইয়ের মৃত্যু হয়। এই মৃত্যুর বিষয়ে চুপ থাকার বিনিময়ে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষ (সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ- সিএএবি) বিশেষ সুবিধা পেয়েছে। 

তিনি বলেন, নিরাপত্তা পদ্ধতি ও নীতি লঙ্ঘনের এ ঘটনায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও গালফ এয়ারের মধ্যে বিশেষ বন্দোবস্ত (কোডশেয়ার) হয়েছে। বিমান বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরতে দেওয়া হবে বলে ভুয়া প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। সিএএবি দুর্ঘটনার দিনের সিসিটিভি ফুটেজও সংগ্রহ করতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রে গালফ এয়ারের কার্যক্রম পরিচালনা করা বা তাদের থাকা খুবই দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। বিষয়টি ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে (এফএএ) জানানো হয়েছে।

এর আগে চলতি বছরের ১৪ মার্চ মোহান্নাদ ইউসুফ হাসান আল হিন্দি মৃত্যুর ঘটনায় ইউনাইটেড হাসপাতালের চিফ কনসালটেন অব দা ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন অ্যান্ড ইমার্জেন্সি মেডিসিন প্রফেসার ডা. ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহত পাইলটের বোন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক তালা এলহেনডি জোসেফানো। ওইদিন আদালত বাদীর জবানবন্দি পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর সকালে ওই পাইলটকে গালফ এয়ারের একটি ফ্লাইট শাহজালাল বিমানবন্দর হতে পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। পরে রাত পৌনে ৩টায় তিনি ফ্লাইট পরিচালনার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন এবং হযরত বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে হোটেল লা মেরিডিয়ান হতে রওনা দেন এবং ভোর সাড়ে ৩টায় তিনি হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছান। ভোর ৪ টা ১০ মিনিটের দিকে ইমিগ্রেশনের প্রক্রিয়া শুরু হলে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ বোধ করেন। তারপর ভোর ৫টার দিকে তাকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে নিয়ে আসা হয়। 

হাসপাতালে পৌঁছার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রফেসর ডা. মো. ওমর ফারুখ এবং সঙ্গে থাকা ইন্টার্ন চিকিৎসক ও নার্সেরা তার চিকিৎসায় কালক্ষেপণ করতে থাকেন। ইউনাইটেড হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পৌঁছানোর পর থেকে দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা পর্যন্ত তাকে কোনো প্রকার চিকিৎসা প্রদান করা হয়নি। চিকিৎসা প্রদান না করায় তিনি বেলা ১২ টা ৮ মিনিটে মারা যান।

এনআর/এসকেডি