চট্টগ্রামে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু
তদন্তহীন সমন-ওয়ারেন্ট : সেই মামলা প্রত্যাহারের আবেদন বাদীর
চট্টগ্রামে পুলিশ পুলিশ হেফাজতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কর্মকর্তা ছৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর মৃত্যুর পর তোলপাড় চলছেই। এবার যে মামলায় শহীদুল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, বাদী রনি আক্তার তানিয়া সোমবার (১৬ অক্টোবর) আদালতে হাজির হয়ে সে মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতের বিচারক কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে এ আবেদন করা হয়। তবে এর পরিপ্রেক্ষিতে কোনো আদেশ দেননি আদালত।
একই আদালতে গত ২৯ আগস্ট মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল। সে সময় আদালত কোনো পুলিশি তদন্ত ছাড়াই প্রথমে দুদকের শহীদুল্লাহসহ দুজনের বিরুদ্ধে সমন দিয়েছিলেন। অভিযোগ উঠে, সমনটি নিজে লুকিয়ে রেখে তড়িঘড়ি করে ওয়ারেন্ট জারি করান ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী হারুন অর রশীদ। পরবর্তীতে দুদকের শহীদুল্লাহর পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর পর নানা মহলে আলোচনা শুরু হলে সেই বেঞ্চ সহকারীর বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি এবং তাকে বদলি করে দেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
বর্তমানে ষষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দায়িত্বে থাকা বেঞ্চ সহকারী ওসমান গণি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ (সোমবার) আদালতে বাদী নিজে হাজির হয়ে মামলাটি স্বেচ্ছায় প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছেন। আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ করেছেন। তবে এ বিষয়ে কোনো আদেশ দেওয়া হয়নি।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
এরই মধ্যে আজ (সোমবার) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছার আদালতে পুলিশ হেফাজতে দুদকের শহীদুল্লাহকে হত্যার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), একই থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ও দুই সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) এবং আরও পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে চান্দগাঁও থানা এফআইআর রুজু করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
জানা গেছে, ভুক্তভোগী শহীদুল্লাহ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক উপ-পরিচালক (ডিডি) ছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি অবসর নেন। তিনি নগরের চান্দগাঁও থানার এক কিলোমিটার এলাকায় থাকতেন। সেখানে জমি নিয়ে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে তার বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে গত গত ২৯ আগস্ট দুদকের সাবেক কর্মকর্তা ছৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও তার শ্যালক মোহাম্মদ কায়সার আনোয়ারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন রনি আক্তার তানিয়া নামে এক নারী। মামলার অভিযোগ শুনে বিচারক ওইদিনই অপরাধ আমলে নিয়ে অভিযুক্ত দুজনের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন।
ওই সমন সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী হারুন অর রশীদ গায়েব করে ফেলেন। ফলে আসামিরা আদালতে হাজির হওয়ার কোনো সমন পাননি। এরপর মামলার পরবর্তী তারিখ দেন আদালত। ওই তারিখে মামলার বাদী হাজির না হওয়ায় তার আইনজীবী সময়ের আবেদন করেন। কিন্তু ওইদিনই আদালত দুই আসামির বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করে দেন। এরপর গত ৩ অক্টোবর দিবাগত রাতে শহীদুল্লাহকে আদালতের ওয়ারেন্ট দেখিয়ে গ্রেপ্তার করে চান্দগাঁও থানা পুলিশ।
অভিযোগ ওঠে, থানায় নেওয়ার পর অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা কয়েকজন অসাধু লোকের যোগসাজশে ভুক্তভোগী শহীদুল্লাহকে নির্যাতন করেন। এমনকি ভুক্তভোগীকে পরিবারের লোকজন ওষুধ দিতে চাইলে থানার পুলিশ কর্মকর্তারা সেগুলো পৌঁছাতে দেয়নি। একপর্যায়ে কয়েকঘণ্টার মধ্যে শহীদুল্লাহ মারা যান।
এমআর/জেডএস