সাবেক দুদক কর্মকর্তার মৃত্যু
সেই মামলা প্রত্যাহার, উল্টো বাদীসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা
চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও থানায় যে মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে পুলিশ হেফাজতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কর্মকর্তা ছৈয়দ মো. শহীদুল্লাহ মারা গেছেন, সেটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। সোমবার (৩০ অক্টোবর) চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতের বিচারক কাজী শরীফুল ইসলামের আদালত এ আদেশ দেন।
একইসঙ্গে মিথ্যা মামলা দায়ের ও প্রতিপক্ষকে হয়রানির অভিযোগে আলোচিত বাদী রনি আক্তার তানিয়াসহ চার জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলাম। চট্টগ্রামের আরেক মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. অলি উল্লাহর আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলার বাকি তিন আসামি হলেন– এস এম আসাদুজ্জামান, মো. জসিম ও মো. লিটন।
বিজ্ঞাপন
চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির আবুল কালাম আজাদ বলেন, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলাম মিথ্যা মামলা দায়ের ও প্রতিপক্ষকে অন্যায়ভাবে হয়রানির অভিযোগে বাদীসহ চার জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে আগামী ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে গত ১৬ অক্টোবর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে হাজির হয়ে তিন জনের প্ররোচনায় পড়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন বলে আদালতকে অবহিত করেন রনি আক্তার তানিয়া এবং মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন করেন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
জানা গেছে, ভুক্তভোগী শহীদুল্লাহ দুদকের সাবেক উপ-পরিচালক (ডিডি) ছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি অবসর নেন। তিনি নগরের চান্দগাঁও থানার এক কিলোমিটার এলাকায় থাকতেন। সেখানে জমি নিয়ে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে তার বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে গত ২৯ আগস্ট দুদকের সাবেক কর্মকর্তা ছৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও তার শ্যালক মোহাম্মদ কায়সার আনোয়ারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন রনি আক্তার তানিয়া নামে এক নারী। মামলার অভিযোগ শুনে বিচারক ওইদিনই অপরাধ আমলে নিয়ে অভিযুক্ত দুজনের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন।
ওই সমন সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী হারুন অর রশীদ গায়েব করে ফেলেন। ফলে আসামিরা আদালতে হাজির হওয়ার কোনো সমন পাননি। এরপর মামলার পরবর্তী তারিখ দেন আদালত। ওই তারিখে মামলার বাদী হাজির না হওয়ায় তার আইনজীবী সময়ের আবেদন করেন। কিন্তু ওইদিনই আদালত দুই আসামির বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করে দেন। এরপর গত ৩ অক্টোবর দিবাগত রাতে শহীদুল্লাহকে আদালতের ওয়ারেন্ট দেখিয়ে গ্রেপ্তার করে চান্দগাঁও থানা পুলিশ।
অভিযোগ ওঠে, থানায় নেওয়ার পর অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা কয়েকজন অসাধু লোকের যোগসাজশে ভুক্তভোগী শহীদুল্লাহকে নির্যাতন করেন। এমনকি ভুক্তভোগীকে পরিবারের লোকজন ওষুধ দিতে চাইলে থানার পুলিশ কর্মকর্তারা সেগুলো পৌঁছাতে দেয়নি। একপর্যায়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শহীদুল্লাহ মারা যান।
শহীদুল্লাহকে পুলিশ হেফাজতে হত্যার অভিযোগ এনে গত ১৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছার আদালতে একটি মামলা করেন তার স্ত্রী। মামলাটিতে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), একই থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ও দুই সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) এবং আরও পাঁচ জনকে আসামি করা হয়। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে চান্দগাঁও থানায় এফআইআর রুজু করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
এমআর/এসএসএইচ