মেধা ও যোগ্যতার চেয়ে জ্যেষ্ঠতাকে প্রাধান্য দিয়ে সোনালী ব্যাংকের পদোন্নতি নীতিমালা ২০২২ কেন অবৈধ ও বাতিল হবে না, এই মর্মে জারি করা রুল খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের পদোন্নতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

রোববার বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

আদালতে রিটকারীদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার বিভূতি তরফদার। সোনালী ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জাকির হোসেন।

এর আগে ২৭ নভেম্বর মেধা ও যোগ্যতার চেয়ে জ্যেষ্ঠতাকে প্রাধান্য দিয়ে নতুন নীতিমালা অনুযায়ী রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের পদোন্নতি কার্যক্রমের ওপর স্থিতাবস্থা বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে এ সংক্রান্ত জারি করা রুল ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে হাইকোর্টকে নিষ্পত্তি করতে বলা হয়। 

গত ১৫ অক্টোবর মেধা ও যোগ্যতার চেয়ে জ্যেষ্ঠতাকে প্রাধান্য দিয়ে নতুন নীতিমালা অনুযায়ী রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের পদোন্নতি কার্যক্রমের ওপর ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থিতাবস্থা জারি করেন চেম্বার আদালত। ১৫ অক্টোবর আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন।

একইদিন সোনালী ব্যাংকের পদোন্নতি কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে দেন বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ। পরে এই আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার আদালতে যান আবেদনকারীরা।

আইনজীবীরা জানান, মেধা ও যোগ্যতার চেয়ে জ্যেষ্ঠতাকে প্রাধান্য দিয়ে তৈরি করা নতুন নীতিমালা অনুযায়ী সম্প্রতি পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করে সোনালী ব্যাংক। এই পদোন্নতির প্রক্রিয়া স্থগিত চেয়ে গত ৮ অক্টোবর হাইকোর্টে সম্পূরক আবেদন করেন সোনালী ব্যাংকের ফার্মগেট আওলাদ হোসেন মার্কেট ব্রাঞ্চের প্রিন্সিপাল অফিসার মোহাম্মদ আক্কাস আলীসহ ৭৯ কর্মকর্তা। এর মধ্যে গতকাল (শনিবার) ও আজ পদোন্নতি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে নতুন নীতিমালা অনুযায়ী ভাইভা পরীক্ষা নিয়েছে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

গত ১৮ এপ্রিল মেধা ও যোগ্যতার চেয়ে জ্যেষ্ঠতাকে প্রাধান্য দিয়ে সোনালী ব্যাংকের পদোন্নতি নীতিমালা ২০২২ কেন অবৈধ ও বাতিল হবে না, তা জানতে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এ রুল জারি করেন বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা।

অর্থসচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

গত ১৭ এপ্রিল মেধা ও যোগ্যতার চেয়ে জ্যেষ্ঠতাকে প্রাধান্য দিয়ে সোনালী ব্যাংকের পদোন্নতি নীতিমালা ২০২২ এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। সোনালী ব্যাংকের ফার্মগেট আওলাদ হোসেন মার্কেট ব্রাঞ্চের প্রিন্সিপাল অফিসার মোহাম্মদ আক্কাস আলীসহ ৭৯ কর্মকর্তা এ রিট দায়ের করেন।

সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ২৮ ফেব্রুয়ারির সভায় নতুন নীতিমালা অনুমোদন হয়। সেখানে বলা হয়েছে, অফিসার থেকে ডিজিএম পর্যন্ত পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা তিন গুণের বেশি হলে প্রণীত জ্যেষ্ঠ তালিকা থেকে প্রতিটি শূন্য পদের বিপরীতে সর্বোচ্চ তিনজন সাক্ষাৎকারের জন্য বিবেচিত হবেন। এতে ১০০টি শূন্য পদের বিপরীতে কেবল জ্যেষ্ঠ ৩০০ কর্মকর্তা ডাক পাবেন। এর বাইরে অধিকতর যোগ্য হলেও তাদের পদোন্নতির জন্য ডাকা হবে না।

বর্তমানে একই পদে তিন বছর হলেই তিনি পদোন্নতির জন্য সাক্ষাৎকার দেওয়ার যোগ্য হন। সেখান থেকে শিক্ষাগত যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা, কর্মক্ষেত্রে বিশেষ কাজ, ব্যাংকিং ডিপ্লোমা, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আছে কি না এবং জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে সার্বিক বিবেচনায় কারও অবস্থান দুর্বল হলে তিনি জ্যেষ্ঠ হলেও পদোন্নতি পান না। এতে সব পর্যায়ে ভালো কাজ করার এক ধরনের প্রতিযোগিতা রয়েছে।

সোনালী ব্যাংকের চাকরি প্রবিধানমালা ২০১৯ অনুযায়ী, ‘পদোন্নতির ক্ষেত্রে মেধা, কর্মদক্ষতা ও জ্যেষ্ঠতাকে গুরুত্ব দেওয়া হইবে’ এবং ‘কেবল জ্যেষ্ঠতার কারণে কোনো কর্মচারী অধিকার হিসাবে তাহার পদায়ন বা পদোন্নতি দাবি করিতে পারিবেন না’ উল্লেখ আছে।

এদিকে, সোনালী ব্যাংকে মেধাতালিকা বাদ দিয়ে নতুন নিয়মে পদোন্নতির প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি জানিয়েছে দ্য অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ। সোনালী ব্যাংকের কর্মচারী পদোন্নতি নীতিমালা-২০২২ বাতিলসহ বেশ কয়েকটি দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি দিয়েছে সংগঠনটি।

এমএইচডি/এসকেডি