জালজালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় অ্যাসরোটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুল ইসলাম ও পরিচালক আমির হোসাইনের আগাম জামিন বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। তাদের দুই সপ্তাহের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তথ্য গোপন করে আদালতের সঙ্গে প্রতারণা করায় এ আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

রোববার (১০ মার্চ) বিচারপতি শেখ জাকির হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

পরে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের মামলায় অ্যাসরোটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুল ইসলাম ও পরিচালক মো. আমির হোসাইন প্রথমে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে আগাম জামিন আবেদন করেন। হাইকোর্টের এই বেঞ্চ থেকে আবেদনটি ফেরত নেন আসামিরা। এই তথ্য গোপন করে বিচারপতি শেখ জাকির হোসেনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে নতুন করে জামিন আবেদন করে আসামিরা। গত ৪ মার্চ হাইকোর্ট তাদের ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন দেন। 

আইনজীবী বলেন, জামিন আবেদন থাকার পরও তথ্য গোপন করে নতুন করে জামিন আবেদনের বিষয়টি আদালতের নজরে নিয়ে আসি আমরা। আদালতের সঙ্গে এ ধরনের প্রতারণার করার কারণে হাইকোর্ট দুই আসামির আগাম জামিন বাতিল করেছেন। 

এদিকে জাল-জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের মামলায় আগাম জামিন নিতে আসা এই আসামিদের হামলার শিকার হন রাজধানী বাড্ডার বিশিষ্ট পাথর ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম। তিনি বিচার চেয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কাছে আবেদন করেছেন।

গত ৩ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম এ অভিযোগ করেন। তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আদালতের মতো পবিত্র জায়গায় এসে যদি হামলার শিকার হই তাহলে যাবো কোথায়? সেদিন যদি আইনজীবী আমাকে রক্ষা না করতো এতদিন আমার কবর হয়ে যেতো।

এ বিষয়ে তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক। আদালত পবিত্র অঙ্গন। এখানে মানুষ বিচার চাইতে আসে। আদালতে এসে যদি মানুষ হেনস্থার শিকার হয় তাহলে খুবই নিন্দনীয়। আমি সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আমিনুল ইসলাম বলেন, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আমি মামলার প্রয়োজনে হাইকোর্টে আসি। ওইদিন আগাম জামিনের জন্য অ্যাসরোটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুল ইসলাম ও পরিচালক আমির হোসাইনও হাইকোর্টে আসেন। এক পর্যায়ে আসামিরা আমার পিছু নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের সামনে আসেন। দুই আসামির নেতৃত্বে ১৫/১৬ জন সন্ত্রাসী আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে অতর্কিত হামলা চালায়। এলোপাথাড়ি মারধর করে বিভিন্ন জায়গায় জখম করে। এক পর্যায়ে আমি প্রাণরক্ষার্থে এক আইনজীবীর রুমে আশ্রয় গ্রহণ করি। পরে আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পাদক বরাবর লিখিত আবেদন করেছি। আসামিরা এখন মামলা তুলে নেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে। আমাকে জানে মেরে ফেলার আশঙ্কা করছি।

বাড্ডার মেসার্স ভাই ভাই ট্রেডার্সের কর্ণধার আমিনুল ইসলাম জালজালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে পল্টন থানায় অ্যাসরোটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুল ইসলাম ও পরিচালক আমির হোসাইনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় গত ৩০ জানুয়ারি ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক রশিদুল আলম আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এই মামলায় আগাম জামিন নিতে আসেন আসামিরা।

এমএইচডি/এসএম