মমতাজের রিমান্ড শুনানিতে সাংবাদিকদের হেনস্তা-হুমকি
সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের রিমান্ড শুনানিকে কেন্দ্র করে ঢাকার নিম্ন আদালতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কাজ করা সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয়েছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। এ সময় তারা সাংবাদিকদের বিভিন্ন হুমকি-ধমকিও দেন।
মঙ্গলবার (১৩ মে) বিকেলে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে বিএনপিপন্থি কয়েকজন আইনজীবী সাংবাদিকদের ওপর চড়া হন।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে মমতাজ বেগমকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরদিন মঙ্গলবার দুপুর ২টা ১৭ মিনিটের দিকে মমতাজকে আদালতে হাজির করা হয়। তাকে ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। বেলা ৩টা ৩ মিনিটের দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল রানার আদালতে তোলা হয়। এ সময় আদালতে অন্য মামলার শুনানি চলছিল। তবে মমতাজকে আদালতে নেওয়া হলে পুরো এজলাস কক্ষ পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এজলাসে কিছুটা হট্টগোল তৈরি হয়।
মমতাজ বেগমকে যখন এজলাসকক্ষে নেওয়া হয় তখন সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহের জন্য সেখানে যান। তারা এজলাসকক্ষে প্রবেশ করেন। তখন দুই আইনজীবী আক্তার মাহবুব আলম ও আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের এজলাস কক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার জন্য বলেন। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হয় দুই পক্ষের। পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়। মমতাজের সাত দিনের রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত তার চার দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
বিজ্ঞাপন
এরপর মমতাজ বেগমকে হাজতখানায় নেওয়া হয়। পরে আইনজীবীরা ব্রিফ করতে সিএমএম আদালতের সামনে রাখা ডায়াসের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন। ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে নিজেদের (আইনজীবীদের) মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এ সময় দুই সাংবাদিক আইনজীবীদের ধস্তাধস্তি না করে সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। এরপরই সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন দুই আইনজীবী মাহবুব আলম ও আবুল কালাম। উপস্থিত সাংবাদিকরা তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। পরে তারা আরও উত্তেজিত হয়ে পড়েন। কে কোথায় কাজ করেন, তা দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। অকথ্য ভাষায় সাংবাদিকদের গালিগালাজ করেন। কয়েকজন সাংবাদিককে হেনস্তা করেন এবং গালিগালাজ করেন।
এ সময় বিএনপিপন্থি কয়েকজন আইনজীবী পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। এ অবস্থায় ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী অভিযুক্ত দুই আইনজীবীকে নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
এ বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক রাব্বি হোসেন বলেন, ‘এজলাসে আমরা কয়েকজন সাংবাদিক উপস্থিত হলে, আইনজীবীরা আমাদের বলেন এখানে সাংবাদিকদের কী কাজ? আমি বলেছি নিউজের জন্যই এসেছি। পরে শুনানি শেষ হলে আমরা বিনয়ের সঙ্গে আইনজীবীদের ডায়াসের সামনে দাঁড়াতে বলি। তারপরই আমিসহ একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদকের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে যান আইনজীবীরা। একপর্যায়ে আমাদের ধাক্কা দিতে থাকেন। ১৭ বছর কই ছিলাম, ইত্যাদি বলে বিএনপিপন্থি আইনজীবী পরিচয় দিয়ে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।’
আরেক সাংবাদিক সিয়াম বলেন, ‘মাহবুব আলী ও আবুল কালাম বারবার সাংবাদিকদের বলছিলেন— আদালত আমার, এখানে আমরা যা বলব তাই হবে। এতে সাংবাদিকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা বাড়ে। পরে তিনি আমাকে দালাল সাংবাদিক, ধান্দাবাজ বলে গালি দেন। তিনিসহ আরও কয়েকজন আইনজীবী গায়ে হাত তোলার জন্য তেড়ে আসেন।’
এ ঘটনায় নিম্ন আদালতে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন কোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিটির পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি লিটন মাহমুদ এবং সাধারণ সম্পাদক মামুন খান। দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান তারা।
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে আইনজীবী মাহবুব আলী ও আবুল কালামকে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
এনআর/এমজে