নির্যাতনে দুই চোখ হারানো কিবরিয়ার ট্রাইব্যুনালে কান্না
গুম করে কুমিল্লা ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা ছাত্রদল নেতার চোখ উপড়ে ফেলার অভিযোগে সাবেক এমপি এম এ জাহেরসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
সোমবার (১৬ জুন) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বরাবর এ অভিযোগ দায়ের করেন কুমিল্লা মহানগরের ৩নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গোলাম কিবরিয়া। পরে সাংবাদিকদের কাছে দুই চোখ উপড়ে ফেলার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বিজ্ঞাপন
চিরতরে অন্ধ হয়ে যাওয়া কিবরিয়া বলেন, চোখ আর কোনো দিন ফিরে পাব না। কোনো দিন পৃথিবীর আলো আর দেখতে পাব না। তবে যারা আজকে আমার এই অবস্থার জন্য দায়ী তাদের বিচার হলে নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারব। এ সময় তার সঙ্গে থাকা দুই ভাই ইয়াসিন আরাফাত ও মো. নেয়ামত রহমানও কান্নায় ভেঙে পড়েন।
কুমিল্লা ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মল্লিকার দিঘী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হাকিম ও সালেহা বেগমের ছেলে গোলাম কিবরিয়া (২৭) বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগে অধ্যয়ন করছেন।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
ট্রাইব্যুনালে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে তারা হলেন— কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ জাহের, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবু তৈয়ব অপি, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার যুবলীগ নেতা আবু সাঈদ বাপ্পি, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. এমরান হোসেন, মো. পাবেল, মো. মোখলেছ, মো. রুবেল, আব্দুল জব্বার, মিরাজুল হক রিমন, অপহরণে ব্যবহৃত গাড়ির চালক মো. শওকত, ব্রাহ্মণপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম বদিউজ্জামান, ব্রাহ্মাণপাড়ার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুমন কুমার আদিত্য, আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ, মেহেদী হাসান খাঁন, মঞ্জুরুল বারী নয়নসহ অজ্ঞাত আরও ২০ থেকে ২৫ জন।
ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বরাবর করা গোলাম কিবরিয়ার আবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালের ২০ আগস্ট রাতে ঢাকা থেকে ট্রেনযোগে কুমিল্লা স্টেশনে নেমে নিজ বাসা কালিয়াজুরি যাওয়ার উদ্দেশে রিকশাযোগে রওনা হওয়ার পথে রাত সোয়া ১টায় এমপি জাহেরের নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫ জন আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে গোলাম কিবরিয়ার রিকশার গতিরোধ করে তাকে অপহরণ করে জাহেরের মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নেওয়া হয়। এরপর অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে রড দিয়ে শরীর ও মাথায় এলোপাতাড়ি নির্যাতন করা হয়। একপর্যায়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবু তৈয়ব অপি ছুরি দিয়ে গোলাম কিবরিয়ার চোখ দুটি উপড়ে ফেলেন। চোখ উপড়ে ফেলার আগে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয় গোলাম কিবরিয়াকে। চোখ উপড়ে ফেলার পর গোলাম কিবরিয়ার আর্তচিৎকার শুনে লোকজন এগিয়ে আসলে আসামিরা চলে যান। এর কিছুক্ষণ পর পুলিশ গোলাম কিবরিয়াকে ওই অবস্থায় আটক দেখিয়ে ব্রাহ্মণপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে তাকে ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। এরপর গোলাম কিবরিয়াকে সেখান থেকে মিথ্যা মামলায় কোর্টে চালান দেওয়া হয়।
পরবর্তী সময়ে গোলাম কিবরিয়ার মায়ের কাছ থেকে আসামিদের যোগসাজশে পুলিশ খালি স্ট্যাম্প ও সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে রাখে যেন মামলা দায়ের করতে না পারে। আসামিদের অত্যাচার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতনের ভয়ের কারণে চেষ্টা করেও মামলা দায়ের করতে পারেনি বলে অভিযোগে উল্লেখ করেছেন সাবেক ছাত্রদল নেতা গোলাম কিবরিয়া।
এমএইচডি/এমজে