ট্রাইব্যুনালে জেরায় রাজসাক্ষী মামুন
গভীর রাতের বৈঠকে যেতাম না, অধস্তনদের বারণ করেছি
২০১৮ সালের পর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় প্রায় রাতে হওয়া বৈঠকে অংশ নিতেন না বলে জানিয়েছেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। নিজের অধস্তন কর্মকর্তাদের এমন বৈঠকে না যেতে বারণ করেছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেনের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা জানান সাবেক এই পুলিশপ্রধান। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেওয়ায় চৌধুরী মামুনকে আজ জেরা করা হয়।
বিজ্ঞাপন
জেরার একপর্যায়ে তার কাছে পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় গভীর রাত পর্যন্ত হওয়া বৈঠকের কথা জানতে চান শেখ হাসিনার আইনজীবী আমির হোসেন।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
মামুন বলেন, আমি আইজিপি থাকাকালীন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের বাসায় নিয়মিত এসব বৈঠক হতো। পুলিশের মহাপরিদর্শক হওয়ার আগেও হয়েছিল। তবে আমি এসব বৈঠকে অংশগ্রহণ করতাম না। এ ছাড়া আমাকে জানানো হতো না। কেননা বৈঠকগুলো ইনফরমাল (অনানুষ্ঠানিক) ছিল।
পাল্টা প্রশ্নে স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী বলেন, এ ধরনের বৈঠকে অংশ নেওয়ায় আইজিপি হিসেবে অধস্তনদের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন কিনা?
জবাবে এই রাজসাক্ষী বলেন, আমার অধস্তন কর্মকর্তাদের এসব বৈঠকে অংশ না নিতে নিবৃত করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা মানেননি। এছাড়া আমি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেইনি। কারণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নেতৃত্বে বৈঠকগুলো হয়েছে বলে বিভিন্ন বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছি।
এর আগে, ২ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনালে দেওয়া জবানবন্দিতে মামুন বলেছেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর পুলিশে রাজনৈতিক প্রভাব আরও বেড়ে যায়। প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন কিছু কিছু কর্মকর্তা। ঊর্ধ্বতন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে তাদের সরাসরি যোগাযোগ ছিল। সেই সুবাদে তারা প্রায় রাতেই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় বৈঠকে করতেন। গোপন সেসব বৈঠক গভীর রাত পর্যন্ত চলতো।
নিয়মিত হওয়া বৈঠকে অংশ নিতেন সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিবিপ্রধান হারুনুর রশীদ, এসবির মনিরুল ইসলাম, ঢাকার ডিআইজি নুরুল ইসলাম, এডিশনাল ডিআইজি বিপ্লব কুমার, এএসপি কাফী, ওসি মাজহার, ফোরকান অপূর্বসহ আরো অনেকে। এর মধ্যে কারো কারো সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি যোগাযোগ ছিল। এজন্য তাদের কেউই চেইন অব কমান্ড মানতেন না। কিন্তু আমি চাইতাম তারা পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করুক।
জুলাই-আগস্টে হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ এখন পর্যন্ত জবানবন্দি দিয়েছেন ৩৬ জন। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় মোট সাক্ষী ৮১ জন। তবে আর পাঁচজনের সাক্ষ্য নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন।
এমআরআর/এমজে