ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষণের শিকার নারীর বিয়ে বন্ধ চেয়ে রিট
ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষণের শিকার নারীর বিয়ে বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে।
জনস্বার্থে সিরাজগঞ্জের বাসিন্দা অ্যাডভোকেট মো. রাকিবুল হাসান এ রিট দায়ের করেছেন।
বিজ্ঞাপন
রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, সমাজ কল্যাণ সচিব, পুলিশের আইজি, কারা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে বিবাদী করা হয়েছে।
বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি আসিফ হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চে চলতি সপ্তাহে রিট আবেদনটির ওপর শুনানি হতে পারে।
বিজ্ঞাপন
ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষণের শিকার নারীর বিয়ে নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে রিট আবেদনটি করা হয়।
একটি মন্তব্য প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকে কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে গায়ক মাইনুল আহসান নোবেলের সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আনীত ধর্ষণ মামলার বাদীর বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। বাদীর অভিযোগ, নোবেল কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন তিনি। মামলাটি বিচারাধীন ছিল।
আসামি নোবেলের পক্ষ থেকে আদালতে লিখিতভাবে বাদীকে বিয়ে করার জন্য অনুমতি চাওয়া হয়। পরবর্তী সময় বাদী ও আসামি উভয় পক্ষের সম্মতিতে বিয়ের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। সংবাদমাধ্যমগুলোয় ফলাও করে ছাপানো হয়েছে সংবাদটি। কিছু সংবাদ পরিবেশনের ধরন দেখে মনে হয়েছে, যেন তারা নোবেলের কোনো সাফল্যের সংবাদ পরিবেশন করছে। সংবাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নোবেলের বিভিন্ন ভঙ্গিতে তোলা ঝলমলে ছবি।
এ ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। কারাগার ও আদালত প্রাঙ্গণে এর আগেও বহুবার ঘটেছে ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষণের শিকার নারী কিংবা কন্যাশিশুর বিয়ের ঘটনা। প্রশ্ন হলো, আর কতকাল ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষণের শিকার নারী কিংবা কন্যাশিশুর বিয়ের ঘটনার সাক্ষী হতে হবে আমাদের?
বিয়ের মাধ্যমে ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধকে সামাজিক ও আইনগতভাবে বৈধতা দেওয়ার ফলে পার পেয়ে যায় নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত, অখ্যাত থেকে বিখ্যাত অনেকেই। বিয়ের মাধ্যমে জামিন লাভ করা যায় সহজেই।
কখনো সালিস কিংবা আপস–মীমাংসার মাধ্যমে, কখনো চড়–থাপ্পড় দিয়ে, কখনো জরিমানা করে, আবার কখনো বিয়ের মাধ্যমে বিচারপ্রক্রিয়া থেকে পার পেয়ে যায় অপরাধীরা। এ ধরনের দৃষ্টান্ত দেখে আশকারা পেয়ে অনেক অপরাধী এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটায়। কারা কর্তৃপক্ষের আয়োজনে কারাগারের গেটে তাই বিয়ের এ ধরনের আয়োজন অত্যন্ত নিন্দনীয়।
ধর্ষণের শিকার নারীর সঙ্গে বিয়ে দিলেই ধর্ষণের অপরাধ কমে যায় না। অপরাধের জায়গাতেই থাকে। তাই বাদীপক্ষ চাইলেও আইন তার অবস্থান থেকে সরে যেতে পারে না। যা অপরাধ, তা অপরাধই।
আরও পড়ুন
ধর্ষণ জঘন্যতম ফৌজদারি অপরাধের একটি। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। ধর্ষণ এমন একটি অপরাধ, যেখানে আপস-মীমাংসার কোনো সুযোগ নেই। অথচ আমরা হরহামেশা তেমন ঘটনাই দেখতে পাচ্ছি।
এমএইচডি/এনএফ