রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক
সম্রাটকে ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রতীকী চালক হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে
অবৈধভাবে গুলিসহ বিদেশি পিস্তল রাখার দায়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
আজ (মঙ্গলবার) ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়া এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে তিনি বলেন, একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে সম্রাটের খ্যাতিমান হওয়া উচিত ছিল। প্রসিকিউশন তাকে ক্ষমতার অপব্যবহারের একজন প্রতীকী চালক হিসেবে চিত্রিত করেছে।
বিজ্ঞাপন
পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, রেকর্ডে উল্লেখ রয়েছে অভিযুক্ত মো. ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের যুব শাখা, যুবলীগ ঢাকা শহর দক্ষিণ ইউনিটের সভাপতি ছিলেন। সেই কারণে তাকে জনসাধারণের শান্তি, প্রগতি এবং জনস্বার্থ রক্ষাকারী নেতা হিসেবে তার আলাদাভাবে খ্যাতিমান হওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু রেকর্ডে আমি যা দেখতে পাচ্ছি তা হলো, প্রসিকিউশন তাকে ক্ষমতার অপব্যবহারের একজন প্রতীকী চালক হিসেবে চিত্রিত করেছে।
তিনি বলেন, তার (সম্রাট) কাছে বৈদ্যুতিক শক মেশিন, বিশেষ লাঠি এবং অ্যাম্ফিটামিন ভিত্তিক মাদক ইয়াবা ট্যাবলেট ছিল, যা গোপন কক্ষে মানুষকে নির্যাতন করার জন্য ব্যবহৃত হতো। আমরা নিশ্চিত নই, তিনি এগুলো ব্যবহার করে কতজনকে নির্যাতন করেছিলেনম, যাদের তিনি তার রাজ্যের জন্য হুমকি বলে মনে করেছিলেন। শুধু তাই নয়, এফআইআরে তাকে ‘ক্যাসিনো সম্রাট’ হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়েছিল এবং ক্যাসিনো ব্যবসার জন্য প্রতিষ্ঠিত প্রায় ১০টি ক্লাবের সাথে তার সম্পৃক্ততা ছিল। তিনি সরকারি ও বেসরকারি অফিসে চাঁদাবাজি চালিয়ে যাওযার জন্য একটি শক্তিশালী ক্যাডার বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং তাদের তিনি পাপের রাজতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ ছাড়াই বজায় রাখার জন্য ব্যবহার করেছিলেন। অভিযুক্ত ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট একটি অত্যাধুনিক ৭.৬৫ পিস্তল এবং পাঁচ রাউন্ড তাজা গুলি রাখার কারণে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ব্যতীত অন্য কোনও শাস্তি আইনের উদ্দেশ্য পূরণে যথেষ্ট হবে না।
বিজ্ঞাপন
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সম্রাটকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে তাকে নিয়ে কাকরাইলের কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। এ সময় সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, পিস্তল ও বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণীর চামড়া উদ্ধার করা হয়। বন্যপ্রাণীর চামড়া রাখার দায়ে তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরদিন ৭ অক্টোবর র্যাব-১-এর ডিএডি আব্দুল খালেক বাদী হয়ে রমনা থানায় মাদক ও অস্ত্র আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ৬ নভেম্বর আদালতে অস্ত্র মামলায় অভিযোগ পত্র জমা দেন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-১-এর উপ-পরিদর্শক (এসআই) শেখর চন্দ্র মল্লিক। গত ১৬ জানুয়ারি সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়। ওইদিন আসামি উপস্থিত না থাকায় তার জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। বিচার চলাকালীন মোট ১৪ সাক্ষীর মধ্যে ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। গত ৭ অক্টোবর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের জন্য ২৮ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।
এনআর/এনএফ