সাংবাদিক হেনস্তা: দায়ী আইনজীবীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি এসআরএফের
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সংবাদ সংগ্রহের সময় তিন সাংবাদিককে জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা হেনস্তা করার ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট রিপোর্টার্স ফোরাম (এসআরএফ)।
এসআরএফের সভাপতি মাসউদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ডালিম এক বিবৃতিতে এ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
বিজ্ঞাপন
বিবৃতিতে তারা বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের হেনস্তা ফৌজদারি অপরাধ, স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর চরম আঘাত ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের শামিল। আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের হেনস্তা স্বাধীন বিচার বিভাগের মর্যাদাকেও ক্ষুন্ন করে। সাংবাদিক হেনস্তার ঘটনায় জড়িত জামায়াতপন্থি আইনজীবীদের বিরুদ্ধে আইনগত ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা। এ ছাড়া প্রকৃত ঘটনা না জেনে তিন সাংবাদিককে জেলে পাঠানোর হুমকি দেওয়ায় বিচারক হাসিবুল্লা পিয়াসের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে এসআরএফ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুর মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের আজ দিন ধার্য ছিল। এ মামলায় আসামি তার বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরা ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির হন। ফারদিনের বাবা নুর উদ্দিন রানাও আদালতে হাজির ছিলেন। শুনানি শেষে আদালত থেকে আসামি বুশরা বের হন। তখন আসামির ভিডিও ফুটেজ নিতে যান কালের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক মাসুদ রানা, একুশে টেলিভিশনের রিপোর্টার আরিফুল ইসলাম এবং দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার রিপোর্টার আরিফুল ইসলাম। এসময় ঢাকা আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য জামায়াতপন্থি আইনজীবী রেজাউল হক রিয়াজ ও হাতিরঝিল থানা জামায়াতের রোকন ও আইনজীবী আক্তারুজ্জামান ডালিমসহ অনেকেই ভিডিও করতে বাধা দেন। সাংবাদিকরা পেশাগত কারণে ভিডিও করার কথা জানালে তারা আরও চড়াও হন। এসময় তারা সাংবাদিকদের বিচারকের কাছে ধরে নিয়ে যেতে জোরাজারি করেন। তবে সাংবাদিকরা জানান, আসামির ছবি বা ভিডিও নিতে আদালতের অনুমতির প্রয়োজন নেই। এই কথা বলায় উপস্থিত আইনজীবীরা ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ পিয়াসের আদালতের বাইরে চারদিক থেকে ঘিরে ধরেন। এক পর্যায়ে আইনজীবী আক্তারুজ্জামান ডালিম সাংবাদিকের মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। এসময় এই মামলার বাদী নুর উদ্দিন রানাকে দেখে হুমকি দিতে থাকেন তিনি। বাদীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি সাংবাদিকদের ডেকে এনেছেন।
বিজ্ঞাপন
এরপর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ পিয়াস এই তিন সাংবাদিকসহ আইনজীবী আক্তারুজ্জামান ডালিমকে এজলাসে ডেকে নেন। এসময় রেজাউল হক রিয়াজ কৌশলে পালিয়ে যান। তখন বিচারক তিন সাংবাদিককে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করান। আদালত সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে বলেন, আপনাদের পরিচয় দেন।
সাংবাদিকদের পরিচয় জানার পর বিচারক বলেন, আপনারা কোর্টের সামনে হাঙ্গামা করেছেন। এখন বেলা ১১টা ৩৮ বাজে, আপনাদের কারাগারে পাঠানো হবে। আর কোনো কথা হবে না। আপনাদের সবার মোবাইল নিয়ে নেওয়া হোক। মিনিট দুয়েক পর বিচারক বলেন, আপনারা নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলে ছেড়ে দেবো। নাহলে কারাগারে যেতে হবে। কোনো ছাড় নেই। পরে এই তিন সাংবাদিককে ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি দেন আদালত।
সাংবাদিক মাসুদ রানা বলেন, সংবাদ সংগ্রহে গিয়েছিলাম। কিন্তু কয়েকজন আইনজীবী ভিডিও তুলতে বাধা দিয়ে মব সৃষ্টি করে। পরে বিচারক অতিউৎসাহী হয়ে আমাদের তিনজনকে কাঠগড়ায় ডাকেন। আমাদের পরিচয় জেনে বিচারক বলেন, আপনারা বসেন। সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হবে।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার রিপোর্টার আরিফুল ইসলাম জানান, আমরা আসামির ভিডিও ধারণ করতে গেলে তাদের আইনজীবীরা চড়াও হন। একজনের মোবাইল কেড়ে নেন। ভিডিও ধারণ করায় বিচারকের কাছে জোর করে তারা আমাদের নিতে চেয়েছে। আমরা যেতে না চাওয়ায় তারা খুব খারাপ আচারণ করতে থাকেন। এসময় আরেক আদালতের বিচারক আমাদের এজলাসে ডাকেন। এরপর কাঠগড়ায় যেতে বলেন। বিচারক কোনো আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর হুমকি দেন। কোনো অপরাধ না করেই নিঃশর্তে ক্ষমা চাওয়া লেগেছে। বিষয়টি খুব দুঃখজনক।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আইনজীবী আক্তারুজ্জামান ডালিম বলেন, একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। পরে বিচারক ডেকে সমাধান করে দিয়েছেন। আইনজীবী রেজাউল হক রিয়াজ বলেন, একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এজন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
এমএইচডি/এনএফ