জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ঘিরে আশুলিয়ায় ছয়জনের মরদেহ পোড়ানোসহ সাতজনকে হত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে জবানবন্দি দিয়েছেন গুলিবিদ্ধ হওয়া ভুক্তভোগী সানি মৃধা। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী বুধবার (৫ নভেম্বর) দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ দিন ধার্য করেন। অন্য সদস্যরা হলেন- অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।

এদিন বেলা সাড়ে ১১টার পর থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ২১তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দিতে পুলিশের গুলিতে নিজে আহত হওয়ার কথা জানান সানি। একই সঙ্গে গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ার নির্মমতার দৃশ্যের বিবরণ দেন। পরে তাকে জেরা করেন স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।

ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর আবদুস সোবহান তরফদার, প্রসিকিউটর আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যরা।

৩০ অক্টোবর (গতকাল) জব্দ তালিকার সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন আশুলিয়া থানার এসআই মো. আশরাফুল হাসান। তিনি একই থানার ওসির নির্দেশে চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল রাইফেলের ছয় রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেন বলে জানিয়েছেন। পরে থানায় জমা দেন এ আলামত।

এ মামলায় গ্রেপ্তার আট আসামিকে আজ সকালেও কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে আনে পুলিশ। তারা হলেন– ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, আবজাল ও কনস্টেবল মুকুল। তবে সাবেক এমপি সাইফুলসহ আটজন এখনও পলাতক রয়েছেন।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রথম দিনের মতো এ মামলায় সাক্ষ্য দেন, শহীদ আস সাবুরের ভাই রেজওয়ানুল ইসলাম ও শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের বাবা মো. খলিলুর রহমান। এর আগের দিন মামলার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ার সেই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা তুলে ধরেন তিনি।

২১ আগস্ট এ মামলায় ১৬ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-২। ওই সময় উপস্থিত আট আসামির সাতজনই নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। তবে দোষ স্বীকার করেন এসআই শেখ আবজালুল হক। একইসঙ্গে রাজসাক্ষী হতে চেয়ে মামলার ব্যাপারে যা জানেন সব আদালতের কাছে বলতে চেয়েছেন। পরে তার দোষ স্বীকারের অংশটুকু রেকর্ড করা হয়। একইসঙ্গে লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজসাক্ষী হওয়ার অনুমতি পান তিনি।

গত ২ জুলাই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেয় প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগের সঙ্গে অন্যান্য তথ্যসূত্র হিসেবে ৩১৩ পৃষ্ঠা, সাক্ষী ৬২, দালিলিক প্রমাণাদি ১৬৮ পৃষ্ঠা ও দুটি পেনড্রাইভ যুক্ত করা হয়। পরে এ মামলায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ছয় তরুণ। এরপর পুলিশ ভ্যানে তাদের লাশ তুলে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। নৃশংস এ ঘটনার সময় একজন জীবিত ছিলেন। কিন্তু তাকেও বাঁচতে দেননি তারা। পেট্রোল ঢেলে জীবন্ত মানুষকেই পুড়িয়ে মারা হয়। এ ঘটনায় গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়।

এমআরআর/বিআরইউ