জবানবন্দিতে এসআই কিবরিয়া
আন্দোলন দমনে ভূমিকার জন্য এক লাখ টাকা পুরস্কার দিয়েছিলেন হাবিবুর রহমান
চব্বিশের জুলাই আন্দোলন দমনে নিলিং পজিশনে গিয়ে চাইনিজ রাইফেল দিয়ে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন ডিএমপির তৎকালীন কমিশনার হাবিবুর রহমান। আন্দোলন দমনে ভূমিকার জন্য রামপুরা থানায় গিয়ে এক লাখ টাকা পুরস্কারও দিয়ে এসেছিলেন তিনি।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া জবানবন্দিতে এমনটিই উল্লেখ করেছেন বর্তমানে রাজধানীর বাড্ডা থানায় কর্মরত এসআই (নিরস্ত্র) মো. গোলাম কিবরিয়া খান।
বিজ্ঞাপন
আজ (মঙ্গলবার) ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রাজধানীর রামপুরায় ছাদের কার্নিশে ঝুলে থাকা আমির হোসেনকে গুলি করাসহ দুজনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে পাঁচ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন তিনি।
এসআই কিবরিয়ার বয়স ৩৩ বছর। বর্তমানে বাড্ডা থানায় কর্মরত রয়েছেন। তবে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় রামপুরা থানায় একই পদে কর্মরত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই আমি থানায় অবস্থানকালে বেতার অপারেটরের মাধ্যমে জানতে পারি আন্দোলন দমনে নিলিং পজিশনে গিয়ে সিআর (চাইনিজ রাইফেল) ফায়ার করার নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান স্যার। পরদিন জুমার নামাজ শেষে দুপুর ২টায় রামপুরায় বিটিভি ভবনের তিন নম্বর ফটকে আমার দায়িত্ব নির্ধারিত ছিল। কিন্তু আমিসহ আমাদের সব পুলিশ সদস্যকে থানায় থাকার নির্দেশনা দেন অফিসার ইনচার্জ স্যার। আমরা সবাই থানায় অবস্থান করি।
কিবরিয়া বলেন, ওই দিন জুমার নামাজের পরপরই থানার আশপাশের এলাকায় জমায়েত হতে থাকেন আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা। এমন পরিস্থিতিতে অফিসার ইনচার্জ স্যারকে বেতার বার্তার মাধ্যমে বিষয়টি জানান বেতার অপারেটর আব্দুর রহমান। তখন বিটিভি ভবন এলাকায় ছিলেন তিনি। তবে বার্তা পেয়ে বিজিবির এপিসি নিয়ে আড়াইটার দিকে রামপুরা থানায় আসেন অফিসার ইনচার্জ মশিউর রহমান স্যার ও খিলগাঁও জোনের তৎকালীন এডিসি মো. রাশেদুল ইসলাম স্যার। এরপর স্যারদের নির্দেশনায় আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়। এতে রামপুরা থানা ভবনের পাশে বনশ্রী জামে মসজিদের সামনে নাদিম নামে একজন নিহত হন। পার্শ্ববর্তী রাস্তায় মায়া ইসলাম নামে আরেকজন নিহত ও মুসা খান নামে এক শিশু গুলিবিদ্ধ হয় বলে জানতে পারি।
তিনি আরও বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে ভূমিকা রাখার জন্য ২১ বা ২২ জুলাই রামপুরা থানায় এসে অফিসার ইনচার্জ স্যারের কাছে এক লাখ টাকা নগদ পুরস্কার দেন কমিশনার হাবিবুর রহমান। ওই সময় ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ ছিল। ইন্টারনেট সচল হওয়ার পর রামপুরা থানা ভবনের পার্শ্ববর্তী নির্মাণাধীন একটি ভবনের ছাদের কার্নিশে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকা একজনকে লক্ষ্য করে গুলি করার ভিডিও ভাইরাল হয়। এ নিয়ে ২৯ জুলাই এডিসি রাশেদুল ইসলাম স্যারের নেতৃত্বে রামপুরা থানায় একটি বৈঠক হয়। সেখানে ভিডিওটি সবাইকে দেখানো হয়। ঝুলন্ত ব্যক্তিকে এসআই তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া ও এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকার গুলি করছিলেন বলে ভিডিওতে শনাক্ত করেন উপস্থিত সবাই।
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে তাকে জেরা করেন পলাতক চার আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন ও গ্রেপ্তার চঞ্চল চন্দ্র সরকারের আইনজীবী সারওয়ার জাহান। এখন পর্যন্ত এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ছয়জন।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, প্রসিকিউটর সাইমুম রেজা তালুকদার ও আবদুস সাত্তার পালোয়ান। এ মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১০ নভেম্বর দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।
এমআরআর/এনএফ