ডলারের লোভ দেখিয়ে নোয়াখালীর একটি মাদ্রাসা শিক্ষকের কাছে থেকে ৪৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার দুই নাইজেরিয়ান নাগরিকের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

বুধবার (৫ নভেম্বর) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলামের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। 

রিমান্ডে যাওয়া আসামিরা হলেন- চীফ চার্লস ওকাফর ওরফে সিমিডো জর্জ ও লুইচ ইকেন্না ইফেজুয়ে।  

এদিন তাদের আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. শামীমুল এহসান তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। এসময় আসামিপক্ষে রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রক্ষের আইনজীবী মুহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালতে তাদের দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। 

প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গত ২৪ এপ্রিল রাজধানীর মতিঝিল থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী মাদ্রাসা শিক্ষক মো. নিজাম উদ্দিন। 

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৪ জুন রাত সাড়ে ৯টায় মো. নিজাম উদ্দিনের হোয়াটসঅ্যাপে মার্কিন সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট পরিচয় মেসেজ দেন। তার নাম ফ্লোরা ডারপিনো। তখন নিজাম উদ্দিন সঠিক পরিচয় প্রদান করেন। কথপোকথনের একপর্যায়ে ওই সার্জেন্ট তাকে বলেন, তিনি ইয়েমেনে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করার জন্য মিশনে এসেছেন। সিরিয়া সীমান্তে বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধে করতে করতে একটি পরিত্যক্ত গাড়িতে কয়েকটি বাক্স পেয়েছেন। যার মধ্যে তিনি নিজের ভাগে ১৪ দশমিক ছয় মিলিয়ন ডলার পেয়েছেন। তখন তিনি মাদ্রাসা শিক্ষককে এই ডলারগুলো দিয়ে বাংলাদেশে এতিমখানা নির্মাণ করার জন্য পাঠাতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এতে শিক্ষক নিজাম সম্মতি প্রকাশ করেন। এসময় ফ্লোরা ডারপিনো তাকে বলেন, আমেরিকান ডিপ্লোম্যাটিক ডেলিভারি কোম্পানির মাধ্যমে এ বাক্সটি তার বাড়িতে পৌঁছে দেবে। তখন নিজাম নিজের ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার তাকে পাঠান। কুরিয়ার সার্ভিস বাবদ ৭০০ ডলার পেমেন্ট করার জন্য অনুরোধ করলে তিনি রাজি হন। একদিন পর তার কাছে কুরিয়ার সার্ভিসের একটি রশিদ পাঠান।

অভিযোগে বলা হয়েছে, আমেরিকান দূতাবাসের কূটনৈতিক পরিচয়ে ডেবিড নামে একজন তাকে ফোন করেন। তখন তিনি বলেন, তার নামে একটি লাগেজ এসেছে। কুরিয়ার সার্ভিসের চার্জ বাবদ ৭৫ হাজার টাকা পাঠাতে হবে। পরে তিনি ইসলামী ব্যাংকের একাউন্টে ৭৫ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন। একদিন পর তাকে ফোন দিয়ে বলা হয়, ইমিগ্রেশন পুলিশ ওই লাগেজটি আটক করেছে। তারা ছবি, ঠিকানা প্রকাশ করার জন্য বলছে। এই তথ্য প্রকাশ করলে আপনি বিপদে পড়বেন অথবা পুলিশকে ১৫ হাজার ডলার দিতে হবে। এই ভয় দেখিয়ে ব্যাংক একাউন্টে ও বিকাশে ২০২৩ সালের ৭ জুন থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত ১৪ লাখ টাকা পাঠান। 

অভিযোগে আরও বলা হয়, কয়েকদিন পর ডেবিড পরিচয় দেওয়া ওই ব্যাক্তি তার বাড়ি নোয়াখালীতে ল্যাগেজের ভেতরে থাকা বক্সটি নিয়ে আসেন। বাক্সটি খুলে তাকে দেখিয়ে বলেন, এগুলো কালো রং করা ডলার। তার সামনে চারটি ডলার পরিষ্কার করেন। এরপর তাকে দেখিয়ে বলেন, বাকি ডলারগুলো পরিষ্কার করতে মেশিন ও ক্যামিকেল লাগবে এভাবে সব পরিস্কার করা যাবে না। আমি পরে মেশিন ও ক্যামিকেল সঙ্গে নিয়ে আসব। এ কথা বলে সে বাক্সটি ল্যাগেজের ভেতরে লক করে চাবি নিয়ে যায়। 

এতে আরও বলা হয়, দুদিন পর ফোন দিয়ে বলেন বিদেশ থেকে মেশিন, কেমিক্যাল ও টেকনেশিয়ান আনতে সময় লাগবে। আবার কয়েকদিন পর ফোন দিয়ে বলে টেকনেশিয়ান বিদেশ থেকে আসতে বাংলাদেশ এয়ারপোর্টে পুলিশের কাছে রেনটাল মেশিন, কেমিক্যালসহ টেকনেশিয়ান আটক হয়েছে। তারা আপনার ঠিকানা ও ছবি প্রকাশ করতে বলছে অথবা তাদেরকে ৩০ হাজার ডলার দিতে হবে। এতে আমি রাজি না হওয়াতে তারা বাক্সটির বিষয়ে পুলিশকে জানিয়ে দেবে বলা জানা৷ পুলিশের ভয় দেখিয়ে ডেবিট তার বাসায় এসে ওই বছরের ২০ জুন নগদ ১১ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ২৫ জুন থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত ১৭ লাখ ১৫ হাজার টাকা দেন। এইভাবে তিনি প্রতারক চক্রকে মোট ৪৪ লাখ ৯০ হাজার ৪০০ টাকা পাঠান। 

এনআর/এমএসএ