হাইকোর্টের সংগৃহীত ছবি

এক মাসের শিশুসহ কিশোরী মাকে সেফহোম থেকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ওই মা স্বামী, নাকি পিত্রালয়ে অবস্থান করবেন তা তার নিজ বিবেচনার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। 

আদালত বলেছেন, এক মাসের শিশু সন্তান নিয়ে কিশোরী মায়ের সেফহোমে থাকা কষ্টকর। মা ও শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনায় এনে নিন্ম আদালতের এ সংক্রান্ত আদেশ স্থগিত করা হলো।

বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেন।

বৃহস্পতিবার (০৭ জানুয়ারি) আদেশ হলেও শনিবার (০৯ জানুয়ারি) আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সরোয়ার হোসেন বাপ্পী।

জানা যায়, বগুড়ায় এক কিশোরী মেয়েকে অপহরণের অভিযোগে মামলা করেন তার বাবা। ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর বগুড়ার শিবগঞ্জ থানায় দায়ের করা ঐ মামলায় অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয় মিন্টু খান নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। 

মামলার অভিযোগে কিশোরীর বাবা বলেন, আমার কন্যা স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। ১৪ নভেম্বর জেএসসি পরীক্ষা শেষে নানার বাড়ি বেড়াতে যায়। পরের দিন বাড়িতে আসার জন্য নানীর সঙ্গে রওনা হয়। কিন্তু পথে আসামি মিন্টু মিয়া ও তার সঙ্গীরা মেয়েকে অপহরণ করে মাইক্রোবাসে করে নিয়ে দ্রুত চলে যায়। আসামিরা গোপন স্থানে নিয়ে ভয় দেখিয়ে যৌন বা বেআইনি কাজে আমার মেয়েকে বাধ্য করেছে। মামলার তদন্ত শেষে চার্জশিট দেয় পুলিশ। 

ঘটনার এক বছর পর গত ২০ ডিসেম্বর মিন্টু বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। আদালত জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। 

এর আগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেন ভিকটিম কিশোরী। জবানবন্দিতে ভিকটিম বলেন, আসামি মিন্টুসহ ৪/৫ জন আমাকে অপহরণ করে ঢাকায় নিয়ে যায়। পরে জোর করে বিয়ে ও শারীরিক সম্পর্ক করে। আমাকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেয়নি।

ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে অপহরণ ও ধর্ষণের বিষয় উল্লেখ করে জবানবন্দি দিলেও ভিকটিমের মেডিকেল পরীক্ষার সময় চিকিৎসকের সামনে দিয়েছেন ভিন্নরকম তথ্য। সেখানে ভিকটিম বলেছেন, আসামির সঙ্গে তার আড়াই মাসের প্রেমের সম্পর্ক। ঘটনার দিন পালিয়ে গিয়ে তারা বিয়ে করেন। তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়। 

বৃহস্পতিবার মামলার শুনানি সময় হাইকোর্ট বলেন, ভিকটিমের দুটি জবানবন্দি একটির সঙ্গে আরেকটির বৈপরীত্য রয়েছে। 

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী বলেন, কিশোরীর একটা এক মাসের সন্তান রয়েছে। ঐ সন্তানসহ তাকে সেফহোমে পাঠিয়েছেন বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। মেডিকেল রিপোর্টে মেয়েটির বয়স ১৫ বছর উল্লেখ করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের বিচারপতি হিসাবে যেকোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার আপনাদের রয়েছে। আপনারা যে সিদ্ধান্ত দিবেন নিশ্চয়ই তা ঐ কিশোরী মা ও তার সন্তানের জন্য মঙ্গলজনক হবে। 

আসামি মিন্টুর আইনজীবী মুহাম্মদ শওকত উল্লাহ খান বলেন, ছেলে ও মেয়ে দুজনই সংসার করতে চাইছেন। পারিপার্শ্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ছেলেটির জামিন মঞ্জুরের আবেদন করছি। যাতে সে কারামুক্তি পেয়ে স্ত্রী ও সন্তানের দেখভাল করতে পারেন। এরপরই হাইকোর্ট মা ও শিশু সন্তান সেফ হোমে রাখার আদেশ স্থগিত করে মিন্টুকে জামিন দেন।

সেফহোমে যে কারণে

কিশোরীকে তার পরিবার নিজেদের কাছে রাখার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করে। ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ বিষয়ে কিশোরীর মতামত জানতে চান। তখন ঐ কিশোরী বলেন, সে বাবা-মায়ের কাছে যেতে চায় না। তখন ট্রাইব্যুনাল অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক হওয়ায় কিশোরীকে সন্তানসহ সেফহোমে রাখার আদেশ দেন। জামিন আবেদন পর্যালোচনার সময় বিষয়টি হাইকোর্টের দুই বিচারপতির নজরে এলে সেফহোমে রাখার আদেশ স্থগিত করা হয়।

এমএইচডি/জেডএস