পিকে হালদার: আর্থিক গোয়েন্দা প্রতিবেদন হাইকোর্টে
প্রশান্ত কুমার হালদার / ফাইল ছবি
পি কে হালদার (প্রশান্ত কুমার হালদার) কিভাবে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছেন সে সংক্রান্ত আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রতিবেদন হাইকোর্টে এসেছে। বিএফআইইউ তাদের নথি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে দাখিল করেছেন।
শনিবার (১৬ জানুয়ারি) ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে দাখিল করা বিএফআইইউর নথিতে পি কে হালদার ও তার ৮৩ সহযোগী এবং ৪৩টি নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দেওয়াসহ একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের বিস্তারিত তথ্যও উঠে এসেছে। এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব ইতোমধ্যে ফ্রিজ অবস্থায় রয়েছে।
বিএফআইইউর গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে ন্যাচার এন্টারপ্রাইজ লি., বিআর ইন্টারন্যাশনাল লি., নিউ টেক এন্টারপ্রাইজ লি. ও হাল ইন্টারন্যাশনাল লি. নামের প্রতিষ্ঠানগুলো মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লি. অধিগ্রহণ পরবর্তী ৩/৪ বছরের দুর্নীতি, জালিয়াতি ও নানাবিধ অনিয়মের মাধ্যমে নামসর্বস্ব ও কাগুজে প্রতিষ্ঠানের ঋণের নামে লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ক্যাপিটাল মার্কেটে ২ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। যা আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি থেকে বিতরণকরা মোট ঋণের ৩ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকার। অর্থাৎ ৬৭ দশমিক ৯১ ভাগ। এ বিষয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ৪৩টি ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের নামে দেওয়া ঋণের অর্থের গতিপথসহ প্রকৃত সুবিধাভোগীদের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সার্বিক পর্যালোচনায় ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের পরিচালনা পর্ষদ, শীর্ষ ব্যবস্থাপনা, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগ, চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার, ক্রেডিট ডিভিশনের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় পি কে হালদার ও তার সহযোগীরা ৮৩ ব্যক্তির ঋণের আড়ালে নানাবিধ অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির দুই তৃতীয়াংশের বেশি অর্থ আত্মসাৎ করেছে। এ দুর্নীতি ও জালিয়াতি মানি লন্ড্রারিং প্রতিরোধ আইনে সম্পৃক্ত অপরাধ বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আগামী ২০ জানুয়ারি এ গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ওপর শুনানি হবে।
প্রসঙ্গত, চারটি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমাণ হাজার হাজার কোটি টাকা। এ চার প্রতিষ্ঠান হলো- ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড, ফাস ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স। নিজ আত্মীয়-স্বজন ও সহযোগীদের দ্বারা নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান তৈরি করে তিনি এ অর্থ আত্মসাৎ করে কানাডায় পালিয়ে যান। হাজার হাজার কোটি টাকা কানাডা, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করেন। এসব প্রতিষ্ঠানের অর্থ পাচার নিয়েও তদন্ত অব্যাহত রেখেছে দুদক ও বিএফআইইউ।
এদিকে পাচারের অর্থে কানাডায় বিলাসী জীবনযাপন করছেন। খুলেছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও। বিদেশে অবস্থান করা পি কে হালদারকে দেশে ফেরাতে দুদকের পদক্ষেপ কি তা জানতে চান দেশের উচ্চ আদালত। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চের এমন আদেশের পর দুদকসহ সব সরকারি সংস্থা পি কে হালদারকে দেশে ফেরাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়।
এমএইচডি/এসএম