গ্রেপ্তার হওয়া চাঁদাবাজ চক্রের সদস্যরা

ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপ ‘সেভেন স্টার’র নাম উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা দাবি করার অভিযোগে গ্রেপ্তার ছয়জনের মধ্যে দুজনের দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বাকি চার জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

রিমান্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বেল্লাল খান ও রাকিব খান টিটুল। কারাগারে যাওয়া আসামিরা হলেন- আব্দুল হান্নান, দেলোয়ার হোসেন, মো. সোহাগ ও খোরশেদ আলম।

শনিবার (১৬ জানুয়ারি) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম মাহমুদা আক্তার শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

এ দিন যাত্রাবাড়ী থানার মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামি বেল্লাল খান ও রাকিব খান টিটুলের সাত দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন। আব্দুল হান্নান, দেলোয়ার হোসেন, মো. সোহাগ ও খোরশেদ আলমকে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন করে আদালতে হাজির করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক বেল্লাল খান ও রাকিব খানের দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বাকি চার আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এর আগে, শনিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের এক সংবাদ সম্মেলনে উপ-কমিশনার (ডিসি) ওয়ালিদ হোসেন জানান, চাঁদা আদায়ে পরিবারের সদস্যদের অপহরণ ও হত্যার হুমকি দিতেন তারা। সর্বশেষ এক ব্যবসায়ীকে চাঁদার দাবিতে বিভিন্ন মোবাইলফোন নম্বর থেকে কল করে অপহরণ ও হত্যার হুমকি দেন। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে সর্বমোট ৩৫ হাজার টাকাও পাঠান তাদের কাছে।

পরে ভুক্তভোগীর দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে চাঁদাবাজ চক্রের প্রধানসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।

বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) ও শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) পুলিশের একটি টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল, তুরাগ ও পল্টন থানা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে। 

এ সময় তাদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির কাজে ব্যবহৃত মোবাইলফোন, সিমকার্ড, ব্যবসায়ীদের মোবাইল নম্বর সংবলিত ডিরেক্টরি ও নথিপত্র উদ্ধার করা হয়।

ওয়ালিদ হোসেন বলেন, ‘চাঁদাবাজির শিকার জনৈক বাদী অভিযোগ করেন যে, অজ্ঞাতপরিচয়ের ব্যক্তিরা ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী সেভেন স্টার গ্রুপের সদস্য জিসান মাহমুদ হিসেবে পরিচয় দেন। তারা জানায়, তাদের গ্রুপের কয়েকজন জেল হাজতে আটক আছেন। তাদের জামিন ও সংগঠন পরিচালনার জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় হচ্ছে। তাই সমাজের প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীদের থেকে তারা আর্থিক সহযোগিতা নিচ্ছে। তারা বাদীর কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। পরে চাঁদাবাজদের ৩৫ হাজার টাকা আরও মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে তাকে ও তার পরিবারকে ক্রমাগত অপহরণ-হত্যার হুমকি দিতে থাকেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানায়, তারা দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীদের ডিরেক্টরি সংগ্রহ করে আসছিলেন। এছাড়া বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতির বার্ষিক সদস্য পরিচিতি (ঠিকানা ও মোবাইল নম্বরের তালিকা) বই সংগ্রহের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীদের মোবাইলফোন নম্বরে কল করে নিজেদের শীর্ষ সন্ত্রাসী দাবি করে অপহরণ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা দাবি ও আদায় করে আসছিল।

ওয়ালিদ হোসেন বলেন, ‘চক্রটি তিনভাগে কাজ করে। একটি দল ব্যবসায়ী ডিরেক্টরি (বিভিন্ন তথ্য) সংগ্রহ করে বাছাই করা ব্যবসায়ীদের নম্বর দ্বিতীয় গ্রুপের কাছে সরবরাহ করে। দ্বিতীয় গ্রুপটি ফোন করে শীর্ষ সন্ত্রাসী সেভেন স্টার গ্রুপের প্রধান কথিত বড় ভাই জিসানের কথা বলতে ফোন ধরিয়ে দিতেন। কথিত সন্ত্রাসী জিসান নানাভাবে চাঁদা দাবি, অপরহণ ও হত্যার হুমকি দিতেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি ওয়ালিদ হোসেন বলেন, ‘যদিও ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী সেভেন স্টার গ্রুপের সঙ্গে এই চক্রের কোনো যোগাযোগ নেই। এই গ্রুপের সদস্যদের মাদারীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও বরিশাল কেন্দ্রিক তৎপর বেশি। এক সময়ের আন্ডারগ্রাউন্ড জগতের প্রভাববিস্তার করা শীর্ষ সন্ত্রাসী সেভেন স্টার গ্রুপের নাম ভাঙিয়ে প্রতারণামূলকভাবে চাঁদাবাজি করে আসছিল তারা।’ 

টিএইচ/এফআর