পাপুলের স্ত্রী-মেয়ের জামিন আবেদনে নথি জাল : রায় ১১ ফেব্রুয়ারি
আদালত প্রাঙ্গণে পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম ও তার মেয়ে ওয়াফা ইসলাম/ ফাইল ছবি
লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম ও তাদের মেয়ে ওয়াফা ইসলাম জামিন আবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নথি জালিয়াতির ঘটনায় রায়ের জন্য আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।
সোমবার (২৫ জানুয়ারি) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। পাপুলের স্ত্রী সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ও মেয়ে ওয়াফা ইসলামের জামিন আবেদনের ওপর শুনানিকালে দাখিল করা এক নথির পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা সুয়োমোটো রুলের ওপর শুনানিকালে এ আদেশ দেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন- অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান। জামিন আবেদনের পক্ষে ছিলেন- অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন- ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ। বাংলাদেশ ব্যাংকের উপপরিচালক মো. আরেফিন আহসান মিঞার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন- তানভীর পারভেজ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন- ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, পাপুল, তার স্ত্রী, কন্যা ও শ্যালিকার বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগের মামলায় দাখিল করা ওই জামিন আবেদনের সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে অর্থপাচার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপপরিচালক মো. আরেফিন আহসান স্বাক্ষরিত একটি নথি দাখিল করা হয়।
বিজ্ঞাপন
ওই জামিন আবেদনে বলা হয়, এই নথি এনআরবি কমার্সিয়াল ব্যাংক থেকে তারা পেয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা আরেফিন আহসান আদালতকে জানান, তিনি এ জাতীয় কোনো কিছু লেখেননি।
এরপর এনআরবি কমার্সিয়াল ব্যাংক থেকে লিখিতভাবে হাইকোর্টকে জানানো হয়, তারা এ ধরনের কোনো নথি দেয়নি। এ অবস্থায় হাইকোর্টের নির্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী এ সংক্রান্ত নথি উপস্থাপন করে আদালতে বলেন, জামিন আবেদনে দেওয়া নথির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নথির মিল নেই। জামিন আবেদনে যা দাখিল করা হয়েছে তা জালিয়াতি হয়েছে। এর সঙ্গে কে বা কারা জড়িত এর তদন্ত হওয়া দরকার।
শুনানিতে জামিন আবেদনকারীর আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, ওই নথি জালিয়াতি যদি হয়ে থাকে তবে এর সঙ্গে কে বা কারা জড়িত তা তদন্ত হওয়া দরকার। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এ বিষয়ে তদন্ত চাওয়া হয়।
দুই কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ ও ১৪৮ কোটি টাকার অর্থ পাচারের অভিযোগে শহিদ ইসলাম পাপুল ও তার স্ত্রী, কন্যা ও শ্যালিকার বিরুদ্ধে গতবছর ১১ নভেম্বর মামলা করে দুদক। এ মামলায় গতবছর ২৬ নভেম্বর তারা হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন তারা। তবে পাপুলের স্ত্রী ও মেয়ের জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হয়। এই শুনানিতে নথি জালিয়াতির অভিযোগ আদালতের সামনে আসে।
গতবছর ৬ জুন কুয়েতের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) শহিদ ইসলাম পাপুলকে গ্রেপ্তার করে। কুয়েত সিআইডি তার বিরুদ্ধে সেখানে মানবপাচার ও অর্থপাচারের মামলা করেছে।
পাপুল কুয়েতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর গত ১১ নভেম্বর তিনিসহ তার স্ত্রী এমপি সেলিনা, শ্যালিকা জেসমিন প্রধান এবং মেয়ে ওয়াফা ইসলামের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গত বছরের ২৬ নভেম্বর অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের মামলায় পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম ও মেয়ে ওয়াফা ইসলাম হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
তাতে অভিযোগ করা হয়, পাপুলের শ্যালিকা জেসমিন প্রধান দুই কোটি ৩১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৮ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।
এছাড়া ‘কাগুজে প্রতিষ্ঠানের’ আড়ালে জেসমিন পাঁচ ব্যাংকের মাধ্যমে ২০১২ সাল থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১৪৮ কোটি টাকা হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং করেছেন বলে অভিযোগে বলা হয়।
এসব কাজে পাপুল, তার স্ত্রী ও মেয়ে সহযোগিতা করেন উল্লেখ করে তাদেরও আসামি করা হয়।
গত ২২ ডিসেম্বর বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ তাদের জামিন নামঞ্জুর করে ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। ২৭ ডিসেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পান তারা।
এমএইচডি/এফআর