সিনেমায় ধূমপান-তামাক নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনা চেয়ে রিট
সিনেমা-নাটকে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ এবং বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে।
বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি ) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনিরুজ্জামান লিংকন এ রিট দায়ের করেন।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি, মাদকবিরোধী সংগঠন ‘প্রত্যাশা’ এবং পপুলেশন ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (পিডিও) পক্ষে এ রিট দায়ের করা হয়।
রিটে জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সচিব, আইনসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, তথ্যসচিব এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জমান লিংকন বলেন, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার সংক্রান্ত আইন থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা অকার্যকর। এজন্য প্রতিকার চেয়ে রিট করেছি।
এর আগে গত বছরের ১১ মার্চ এ বিষয়ে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ এর ১৪(২) ধারা সংশোধন এবং আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সচিব, আইনসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, তথ্যসচিব এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যানকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। ওই নোটিশের জবাব না পাওয়ায় এ রিট দায়ের করেন।
আইনজীবী বলেন, আইনের ১৪(২) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার লিখিত অভিযোগ ছাড়া কোনো আদালত এ আইনের অধীন কোনো অপরাধ বিচারের জন্য গ্রহণ করবে না। যা সংবিধানের ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পাশাপাশি ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারে ক্ষতিগ্রস্তরাও যেন মামলা করতে পারেন এজন্য আইনের ১৪(২) ধারা সংশোধন চেয়েছি।
রিটে আরও বলা হয়েছে, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর একথা বলার অপেক্ষা রাখেনা। এ জাতীয় পণ্যের প্যাকেটেই ক্ষতির বিষয়গুলো উল্লেখ রয়েছে। যদিও ধূমপায়ীরা এসব ক্ষতি সম্পর্কিত বার্তা আমলে নেয় না। এজন্য ধূমপান ও তামাক জাতীয় পণ্যের উৎপাদন উত্তরোত্তর বেড়েই চলছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এসব পণ্যের প্রচার-প্রচারণাও। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে প্রায় প্রতি বছর বাজেটে সরকার কর বৃদ্ধি করে থাকে। কিন্তু অতিরিক্ত করারোপ ও ক্রমশ দাম বৃদ্ধি পেলেও ব্যবহার সেই অর্থে কমানো যায়নি। পাশাপাশি ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে করা আইনও অনেক ক্ষেত্রে অকার্যকর বলা চলে।
রিটে বলা হয়, ২০০৩ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ৫৬তম সম্মেলনে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার জন্য ‘ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)’ নামে কনভেনশনে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। ওই কনভেশনের বিধানাবলী বাংলাদেশে কার্যকর করা লক্ষ্যে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের উৎপাদন, ব্যবহার, ক্রয়-বিক্রয় এবং বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণ করতে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ প্রণয়ন করে সরকার।
আইনানুযায়ী প্রকাশ্যে ধূমপান দণ্ডনীয় অপরাধ। আইনে পাবলিক প্লেস কিংবা গণপরিবহনে ধূমপান করলে তিনশত টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।
আইনে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা নিষিদ্ধ এবং পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত ধারা ৫ (১)(ক) তে বলা হয়েছে, ‘প্রিন্ট বা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায়, বাংলাদেশে প্রকাশিত কোনো বই, লিফলেট, হ্যান্ডবিল, পোস্টার, ছাপানো কাগজ, বিলবোর্ড বা সাইনবোর্ডে বা অন্য কোনোভাবে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করিবেন না বা করাইবেন না।’
একই আইনের ধারা ৫(১)(ঙ) তে বলা আছে, ‘বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত বা লভ্য ও প্রচারিত, বিদেশে প্রস্তুতকৃত কোন সিনেমা, নাটক বা প্রামাণ্য চিত্রে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য টেলিভিশন, রেডিও, ইন্টারনেট, মঞ্চ অনুষ্ঠান বা অন্য কোনো গণমাধ্যমে প্রচার, প্রদর্শন বা বর্ণনা করিবেন না বা করাইবেন না।’
অর্থাৎ আইনে প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধের পাশাপাশি বিজ্ঞাপন ও প্রচারণার ক্ষেত্রেও বিশেষ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।
অথচ দেশের সিনেমা-নাটকে অভিনয়ে তামাকজাত দ্রব্যের অবাধ ব্যবহার লক্ষণীয়।
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার সম্পর্কিত এমন ভুরিভুরি দৃশ্য অন্যান্য নাটক-সিনেমায় দেখা যায়। এতে সাধারণ মানুষ ধূমপানে উৎসাহিত হয়। এ কারণে সিনেমা-নাটকে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ এবং বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়ের করেছি।
এমএইচডি/এসএম