মাকে নিয়ে যত বলি কমই বলা হবে
ছবি: প্রতীকী
পৃথিবীতে সব মা-ই সন্তানের চোখে সেরা। তার মতো কেউ নয়। তাই যে কেউ মাকে নিয়ে বিশাল গল্প বুনে যেতে পারবে। অনর্গল সে গল্প। আমার মাও তার ব্যতিক্রম নয়। মায়ের সে সংগ্রামমুখর জীবন বুঝতে শেখার পর থেকেই দেখেছি। বাবার অবহেলাকে তুচ্ছজ্ঞান করে আমাদের কীভাবে বুকে আগলে রেখেছেন। বড় করে তুলেছেন তা কি অল্প শব্দে বলা যায়! যায় না। মায়েরা এমনই হন। তারা সন্তানের মুখে হাসি দেখলে সব ভুলে যান, তাদের দুঃখ, কষ্ট, দুর্দশা ও হতাশা নিমিষেই উধাও হয়ে যায়।
কী এক আকর্ষণ দিয়ে আল্লাহ গড়েছেন মাকে। মা কি নিজেও বোঝেন তা! হয়তো বোঝেন। হয়তো বোঝেন না। মাকে দেখেছি আমাদের একটু ভালো রাখতে এবং নিজের প্রতিভা ছড়িয়ে দিতে যারপরনাই কষ্ট করেছেন। সকালে মা মক্তব চালাতেন। বাড়ির উঠোনে বসতো কুরআন পাঠের মেলা। সকালের স্নিগ্ধ বাতাসে সে সুর ভেসে বেড়াতো। আমি তো মায়ের কাছেই কুরআন পড়া শিখেছি। কোনো মসজিদের মক্তবে যাইনি। যাওয়ার প্রয়োজন ছিল না। মা পড়াতেন। কতজনকে কুরআন পড়িয়ে খতম করিয়েছেন। মিষ্টিও তো কম খাইনি। কুরআন পাঠের শব্দে মুখরিত থাকতো ভোরের পরিবেশ।
বিজ্ঞাপন
রান্না বান্না ও সাংসারিক কাজ শেষে জেনারেল প্রাইভেট পড়াতেন গোটা কয়েক। আসলে একটু ভালো থাকার জন্যই। আমাদের একটু ভালো রাখার জন্যই। কিছুদিন পর মা বুঝলেন এই অল্প আয়ে সংসার চালানো মুশকিল। বাবা সে তো লাপাত্তা। কী করা যায়? এক আত্মীয়ের পরামর্শে মা দর্জির কাজ শিখতে শুরু করলেন। মা প্রচণ্ডরকম মেধাবী। কাজ শিখতে তার বেশিদিন লাগেনি। পুরোনো একটা মেশিন কিনে কাজ শুরু করে দিলেন। প্রথমে নিজের। এরপর বাড়ির লোকদের। নিখুঁত বানানো দেখে প্রতিবেশীরা আসতে শুরু করলো।
মা রীতিমত দর্জির কাজ করতে লাগলেন। আয়ের বড় রকমের এক উৎসো হলো। আল্লাহর মেহেরবানিতে দিব্যি চলছিলো। আমাদের পড়াশোনার খরচ জোগানো, সংসার পরিচালনা এসবই হতো টুকটাক ওই দর্জি কাজেই। কিছু টাকা জমিয়ে মা নতুন কাপড় তুললেন। আমাদের ঘরটা ছোটোখাটো দর্জির দোকান হয়ে গেলো। আমরা উপভোগ করতাম। মায়ের বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করার চেষ্টা করতাম।
বিজ্ঞাপন
মায়ের এই কষ্টের ওপর দাঁড়িয়ে আজ আমরা একটা পর্যায়ে এসেছি। আলহামদুলিল্লাহ। সম্পূর্ণ মায়ের পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টায় হাফিজুল কুরআন হলাম। দাওরায়ে হাদীস শেষ করলাম। অপরদিকে অনার্স শেষবর্ষে আছি। আছি একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে। দিবস মেনে এমন মাকে কি ভালোবাসা যায়? মাকে ভালোবাসি প্রতিদিন, প্রতিটি মুহূর্তেই। দিবস তো শুধু আনুষ্ঠানিকতা।
মা! তোমার অবদান ভুলিনি। মা দিবসে তোমাকে অনেক শ্রদ্ধা। ভালোবাসা। দুআ। তোমার ছায়া আমাদের উপর দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হোক৷ তোমার উভয় জগত সুন্দর হোক এটাই প্রত্যাশা।
চতুর্থ বর্ষ, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, বরিশাল সরকারি বিএম কলেজ।