বাবা, কেন এত দ্রুত চলে গেলে?
ছবি: প্রতীকী
বাবা যখন আমাদের ছেড়ে চলে যান,তখন আমি স্কুলে। বাবার হঠাৎ অসুস্থতার কথা শুনে দ্রুত বাড়ি এসে দেখলাম বাবার নিথর মুখ, নিস্তব্ধ দেহ। মুহূর্তের মধ্যে আমার পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে যায়। তারপর কেটে গিয়েছে দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময়। একসময় জীবনের প্রয়োজনে বাড়ি ছেড়ে শহরবাস শুরু হয়। কিন্তু বাবার শখের কৃষ্ণচূড়া ঘেরা সেই গ্রামের বাড়িটি আমায় বড্ড নস্টালজিক করে দেয় আজও। স্মৃতি হাতরে পাই আমার সেই পাড়া গাঁয়ের শৈশবের ঘ্রাণ। যে শৈশবের প্রায় সবটা জুড়েই আছেন আমার বাবা।
এখনও প্রতি বর্ষায় বাবার শখের কামিনি, কদমের ঘ্রাণে ম ম করে পুকুড়পাড়। বাবার সফেদ বিছানার ধারে খোলা জানলা দিয়ে যে রোদ্দুর খেলা করতে দেখেছি ছেলেবেলায়, সেই রোদ্দুরে যেন বাবার কোরআন তিলাওয়াত ভেসে আসে। এখানে বসেই বাবা দীর্ঘক্ষণ কোরআন তিলাওয়াত করতেন। লোডশেডিং-এর রাতে বাবার সঙ্গে উঠোনে মোড়া পেতে বসতাম। বাবার হাতপাখা চলতো অবিরাম, সাথে বসতো গল্পের পসরা। সেইসব তারাভরা রাতে বাবার কাছেই চিনেছিলাম সপ্তর্ষিমণ্ডল, ছায়াপথ আর কালপুরুষ।
বিজ্ঞাপন
বাবা আমার প্রথম এবং প্রিয় শিক্ষাগুরু, যার কাছে শিখেছি বর্ণমালা থেকে শুরু করে সহজ সাধারণ জীবনপাঠ। দু’টি হাতে বাবা খুব যত্ন করে শিখিয়ে গিয়েছিলেন প্রথম চলতে শেখা এবং মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকা সকল প্রতিকূলতায়। তবু বাবা চলে যাওয়ার পর নিজেকে শেকড়বিহীন ক্ষুদ্র চাড়াগাছ বলে আবিষ্কার করি। বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের সবকিছুর বিনিময়ে ফিরে পেতে চাই বাবার সাথে কাটানো সেই অমূল্য মুহুর্তগুলো। জানি সেই দিনগুলো আমায় কেউ ফিরিয়ে দেবে না। তবু মন খারাপের দিনে বাবার কাছেই শত অভিযোগ মাখা দীর্ঘ চিঠি লিখি-
‘আপনি এত দ্রুত কেন চলে গেলেন বাবা? আপনার যত্নের চশমা, ঘড়ি কিংবা আতশি কাঁচটা তো চাইলেই ছোঁয়া যায়, তাহলে আপনি কেন স্পর্শের বাইরে চলে গেলেন! জীবন এত ছোট কেন বাবা, একজন মানুষ কীভাবে নিমিষেই হারিয়ে যায়?’
বিজ্ঞাপন
শৈশবেই হারিয়ে ফেলা সেই নীল চাদর পড়া অশীতিপর মানুষটিই আমার আজীবনের রাজপুত্তুর।