ছবি: প্রতীকী

আমার বাবা আমার জীবনে সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। বাবা আমার ছোট বড় কোনো ইচ্ছাই অপূর্ণ রাখেনি। ছোটবেলা থেকে যেমন আদর যত্নে বড় করেছে ঠিক তেমনি ন্যায়-নীতিতে আমার বাবা একজন আদর্শ মানুষ। ছোট থেকেই আমার মশারি টানাতে একদম ইচ্ছে করতো না, বাবা সারাদিন পর অফিস শেষ করে এসে আমার রুমের মশারি টানিয়ে দিত যাতে আমাকে মশা না কামড়ায়। একটু ঠান্ডা লাগলেই আমার কাশি হয়ে যেত, আমি যখন রাতে কাশতাম পাশের রুম থেকে বাবা গুনতো আমি কতবার কাশি দিয়েছি, মাঝ রাতে ঘুম থেকে উঠে এসে রান্নাঘর থেকে খুজে কয়েকটা লবঙ্গ আমার হাতে দিতো চিবানোর জন্যে যাতে একটু আরাম হয়। 

আমার একটু জ্বর হলেই বাবা নিজে হাতে ৮/৯ টা লেবু দিয়ে শরবত বানিয়ে দিত আর একটু পরপর খাওয়ার জন্য জোর করতো। করোনার সময় আমার একবার খুব জ্বর হয়েছিল, গলা বসে গিয়েছিল, আমার পরিবারের সবাই বলেছিলো আমাকে একঘরে করে দেওয়ার জন্য, আমার হয়তো করোনা হয়েছে। শুধুমাত্র আমার বাবা নিষেধ করেছিল, আমার বাবা আমার মাকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছিল এবং বলেছিল, ‘বাচঁলে আমার মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বাচঁবো নাহয় একসাথে মরবো’।

আমি কখনোই খুব ভালো স্টুডেন্ট ছিলাম না। ছোটবেলা থেকে কোনো বোর্ড পরীক্ষায়ই আমি এ+ বা গোল্ডেন এ+ পাইনি, এমনকী কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও আমি চান্স পাইনি। চারপাশের প্রতিবেশীরা যখন বড় মুখ করে মিষ্টি দিতে আসতো তখন আমার মনে হতো আমি কখনোই আমার কোনো সাফল্যের জন্যে আমার বাবাকে মিষ্টি কেনার আনন্দ দিতে পারিনি। তখন আমার বাবা আরও বড় মুখ করে বলতো আমার মেয়ে যা পেয়েছে তাতেই আলহামদুলিল্লাহ। 

কোনো কিছু নিয়ে যখন আমার মন খারাপ হতো, আমার বাবা কীভাবে যেন বুঝে যেত। যখনই গলার কাছে কান্না চলে আসতো তখনই কোনো এক‌ অলৌকিক শক্তির জোরে ধরে ফেলতো আর আমার মন ভালো করে দিত। আমার বাবা আমাকে অনেক বিশ্বাস ও ভরসা করে। আমার বাবা হয়তো অনেক ধন-সম্পত্তির মালিক না কিন্তু যা আছে সমস্ত কিছু আমাকে দেখিয়েছে। কোথায় কত টাকা আছে, কীভাবে টাকা তুলতে হবে, ক্রেডিট কার্ডের পাসওয়ার্ড যাবতীয় সবকিছু আমার বাবা আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে আর বলছে আমার বাবার অনুপস্থিতিতে আমি যেন সেগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারি। এই যে আমার বাবা আমাকে এত ভরসা করে এটা তা কতটা আনন্দের সেটা বলে বোঝানো যাবে না।

পৃথিবীতে বাবা-মায়ের ভালোবাসাই একমাত্র নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। ছোটবেলায় বাবা যেটা নিষেধ করতো সেটাই মনে হতো আরো বেশি করে চাই, সময়ের ব্যবধানে আজ মনে হয় বাবা যেটা নিষেধ করতো সেটাই আসলে ঠিক। 

চাকুরিসূত্রে, আমার আর আমার বাবার দূরত্ব এখন অনেক। আমার বাবা আমার হাতের চা খাওয়ার জন্যে বায়না করতো মাঝে মাঝে আমি অনেক বিরক্ত হতাম। তখন বলতো আমি না থাকলে তখন চা বানানো মিস করবে, তখন বলতাম একদম মিস করবো না। কিন্তু এখন আমি আসলেই মিস করি। বাবার ছোট ছোট আদর ভালোবাসাগুলো খুব মিস করি। অফিসে কোনো অনুষ্ঠান থাকলে সেখানের খাবার নিজে না খেয়ে বাবা নিয়ে আসতো আমার জন্য। বাজার থেকে বাসায় আসার সময় আমার পছন্দের কিছু না কিছু নিয়ে আসতো। 

জীবনের প্রতিটি পদে পদে আমি আমার বাবার সাপোর্ট পেয়েছি যা হয়তো বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু কখনো বাবাকে ভালোবাসার কথা বলা হয়নি, সত্যি বলতে কী জানো বাবা? আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি।