ভালোবাসা আর বসন্তের রঙে রঙিন বইমেলা
বাতাসে বসন্তের বার্তা। প্রকৃতি খুলেছে তার দখিনা দুয়ার। প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে বিদায় নিয়েছে শীত। ঋতুরাজ বসন্ত তার নিজস্ব উষ্ণতায় প্রাণ সঞ্চার করছে, ফাল্গুনের হাওয়া দোলা খাচ্ছে প্রকৃতিতে। ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। ফাল্গুনের হাত ধরে ঋতুরাজ বসন্তের আগমন।
সেই সঙ্গে ভালোবাসার গানে, ভালোবাসার মহা অনুভূতির কাছে নিজেকে নিশ্চিন্তে সঁপে দিতে এসেছে ভালোবাসার বিশেষ দিবস ভালোবাসা দিবস। সব মিলিয়ে আজ ভিন্ন এক পরিবেশ অমর একুশে বইমেলার।
বিজ্ঞাপন
নারীদের কেউ এসেছেন রঙিন শাড়ি আর মাথায় ফুলের ব্র্যান্ড পরে। ছেলেরাও বাহারি পাঞ্জাবি। কেউ এসেছেন যুগলবন্দি হয়ে, কেউবা অভিভাবকের হাত ধরে, বন্ধুরা মিলেও সেই জনস্রোত এসে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছেন। ভালোবাসা দিবস আর বসন্তের রং মিলে ভিন্ন রূপ দেখা যাচ্ছে আজকের বইমেলায়।
বিজ্ঞাপন
রাজধানীর উত্তরা থেকে স্ত্রী সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে বইমেলায় এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী ফরিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, আজকে ছুটির দিন তারমধ্যে বসন্ত উৎসব, ভালোবাসার দিন। যে কারণে পরিবারসহ আজকে ঘুরতে বেরিয়েছি, এসে পৌঁছেছি বইমেলায়। ঘুরে ঘুরে বেশ কিছু বইও ইতিমধ্যে কিনেছি। আজকের বইমেলাটা একটু ভিন্ন রকম। মানুষের ঢল নেমেছে আজকের বইমেলায়।
কিনি আরও বলেন, বেশিরভাগ নারীরা বাসন্তী রংসহ নানান কালারফুল শাড়ি পড়ে বইমেলায় এসেছেন। ছেলেরাও পাঞ্জাবি পড়ে আপনজনের নিয়ে স্টলে স্টলে ঘুরছে। সব মিলিয়ে বলতে গেলে আজকের বই মেলাটা রঙিন রূপ নিয়েছে।
রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কজন সহপাঠী মিলে আজকের বইমেলায় এসেছেন। তাদের মধ্যে একজন আবির ফেরদৌস। তিনি বলেন, আজকের বিশেষ দিনে বন্ধু-বান্ধবরা মিলে বইমেলা এসেছি। নারীরা শাড়ি আর আমরা পাঞ্জাবি পরে বইমেলায় ঘুরছি। আজকে প্রচুর পরিমাণে ভিড় বইমেলায়। অন্যান্য দিনগুলোতেও বইমেলায় এসেছি তবে আজকে বইমেলা একদম ব্যতিক্রম, বলতে গেলে মানুষের পা ফেলার জায়গা নেই। রঙিন পাঞ্জাবি, রঙিন শাড়ি আর মাথায় ফুল নিয়ে ঘুরছেন তরুণ তরুণীরা।
বইমেলায় অবসর প্রকাশনীর স্টলে দায়িত্বরত বিক্রয় কর্মী জুলফিকার আহমেদ বলেন, অন্যান্য দিনের তুলনায় আজকের বইমেলায় প্রচুর মানুষের আগমন। বিক্রিও অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি। তবে আজকে বলতে গেলে তরুণ তরুণীর সংখ্যা বইমেলায় চোখে পড়ার মত। রঙিন শাড়ি পাঞ্জাবি , ফুল সব মিলিয়ে আজকে অন্যরকম রূপ পেয়েছে বইমেলা।
‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’— এ প্রতিপাদ্য নিয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে অমর একুশে বইমেলা। এবারের বইমেলায় গত বছরের তুলনায় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান, স্টল, প্যাভিলিয়ন, প্রতিষ্ঠান সব কিছুই বেড়েছে। এবারের বইমেলায় মোট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৭০৮টি। যার মধ্যে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯৯টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৬০৯টি। মোট ইউনিট ১০৮৪টি। গত বছর প্রতিষ্ঠান ছিল ৬৪২টি এবং ইউনিট ছিল ৯৪৬টি। একইভাবে এবার মোট প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ৩৭টি, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬টি। গত বছর প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ছিল ৩৭টি।
আরও পড়ুন
এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছাকাছি গাছতলায় করা হয়েছে। সেখানে ১৩০টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শিশু চত্বরে মোট প্রতিষ্ঠান ৭৪টি এবং ইউনিট ১২০টি দেওয়া হয়েছে। যা গত বছর প্রতিষ্ঠান ছিল ৬৮টি এবং ইউনিট ১০৯টি।
বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আজ ছুটির দিনে বইমেলা নির্ধারিত সময়ের আগে শুরু হয়ে এবং শেষও হবে আগেভাগেই। আজ বিকেল ৩টার পরিবর্তে সকাল ১১টায় খুলছে বইমেলার গেট। আর পবিত্র শবে-বরাত উপলক্ষ্যে রাত ৯টার পরিবর্তে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শেষ হবে আজকের বইমেলার কার্যক্রম।
এএসএস/এমএন