বইমেলায় হাতে আঁকা নিজের ছবি মিলছে ১০ মিনিটেই
পার্থ রায়, পেশায় একজন চিত্রশিল্পী। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এ মানুষটি কথা বলতে না পারলেও পেন্সিলের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন চমৎকার সব মুখাবয়ব। বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের সরাসরি শিষ্য পার্থ ২৫ বছর ধরে চালিয়ে যাচ্ছেন তার শিল্পকর্ম।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বইমেলার প্রাঙ্গণে এ প্রতিবেদকের দেখা হয় তার সঙ্গে। কথা বলতে না পারলেও উচ্ছ্বাস প্রকাশে এতটুকুও ঘাটতি ছিল না তার। কাগজে লিখে লিখে উত্তর দিয়েছেন প্রতিটি কথার।
বিজ্ঞাপন
পার্থ জানান, গত কয়েক বছর ধরে বইমেলায় মানুষের মুখাবয়ব বা পোট্রেট আঁকার কাজ করছেন। ১০ মিনিটের মধ্যেই কাগজে ফুটিয়ে তোলেন যে কারো ছবি। হাতে আঁকা নিজের ছবি দেখে ক্রেতারা যখন আনন্দিত হন, সেটা কাজ করে তার মধ্যেও।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
তবে পার্থ কিছুটা বিষাদের সুরেই হয়ত বলতে চাইলেন, আগের মতো মানুষ আর নিজেদের পোট্রেট করান না। এখন দিনে সর্বোচ্চ ৪ থেকে ৫টা পোট্রেট করেন তিনি।
পার্থের কথার মিল পাওয়া যায় বইমেলায় আসা অন্য পোট্রেট শিল্পীদের কাছেও। ‘১০ মিনিটে আঁকুন নিজের ছবি’ এমন বিজ্ঞাপনে গত কয়েক বছর ধরেই শিল্পীরা চেয়ার বসিয়ে আসছেন বইমেলার প্রাঙ্গণে। ছবি আঁকার এ কর্মযজ্ঞ বইমেলার কোনো আনুষ্ঠানিক পর্ব না হলেও বছরের পর বছর তা বাড়িয়ে এসেছে মেলার সৌন্দর্য। বরাবরের মতো এবারের বইমেলাতেও রয়েছে পোট্রেট শিল্পীদের উপস্থিতি।
বুলবুল ললিতকলা একাডেমির শিক্ষক আশিকুজ্জামান সুজনের চিত্রশিল্পের ক্যারিয়ার প্রায় ১২ বছরের। অন্য শিল্পীদের পাশাপাশি তিনিও প্রতিবছর বইমেলায় মানুষের পোট্রেট এঁকে থাকেন। সুজন জানান, কেউ পোট্রেট করাতে চাইলে তার খরচ করতে হবে সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা। তবে ফোন থেকে দেখে আঁকার ক্ষেত্রে খরচটা একটু বেশি।
মানুষের পোট্রেট আঁকার আগ্রহ কেন কমে গেছে– জানতে চাইলে সুজন সামনে আনেন প্রযুক্তির কথা। তিনি বলেন, প্রযুক্তির সহায়তায় এখন চাইলেই মুহূর্তের মধ্যে নিজের পোট্রেট বিনা পয়সায় তৈরি করা সম্ভব। তাই এভাবে ছবি আঁকাতে আগ্রহ তৈরি না হওয়াটাই স্বাভাবিক।
তবে শিল্পমনা মানুষরা যে প্রযুক্তির চাইতে এখনো শিল্পী ও তাদের শিল্পকর্মকে প্রাধান্য দিচ্ছেন, তার প্রমাণ মেলে ছবি আঁকাতে আসা মানুষগুলোর কথাতেই। বইমেলা ঘুরতে এসে নিজেদের পোট্রেট করাতে বসেছিলেন দম্পতি ফয়সাল মাহমুদ ও রেবেকা ইসলাম। ছবি আঁকা শেষ হতেই বললেন, একজন শিল্পী চেষ্টা করেন তার মমতা দিয়ে একটি ছবি আঁকতে। সে ছবিতে শিল্পীর যে অ্যাফোর্ট থাকে, তা ছবিটাকে জীবন্ত করে তোলে। আজকের ছবিটা বইমেলার একটা স্মৃতি হয়ে থাকবে, একইভাবে আমাদের নিজস্ব একটা স্মৃতি হিসেবেও ঘরের দেয়ালের সৌন্দর্য বাড়াবে।
ওএফএ/এসএসএইচ