ক্রমেই বাড়ছে ইন্টারনেটে ভুয়া সংবাদ ছড়ানোর প্রবণতা। গবেষণায় এসেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ছড়ানো কনটেন্টের ৮০ শতাংশই নকল বা ভুয়া। এগুলো সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা ছড়াচ্ছে। এগুলো থেকে ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠান যে কেউ-ই বিভিন্নভাবে মারাত্মক ক্ষতির শিকার হতে পারেন। তাই ভুয়া সংবাদের ফাঁদ থেকে রক্ষায় মূলধারার গণমাধ্যমের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

রোববার (১৬ অক্টোবর) রাতে এক ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।

‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া সংবাদ’ বিষয়ক আলোচনায় অংশ নেন আন্তর্জাতিক সাইবার নিরাপত্তা সেবাদানকারী কোম্পানি সোফোসের বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার প্রযুক্তিবিদ এএইচএম মোহসিন, ইন্টারনেট সোসাইটি বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের জেনারেল সেক্রেটারি মোহাম্মদ কাওছার উদ্দীন, ঢাকা মহানগর পুলিশের সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. নাজমুল ইসলাম ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাবের গবেষণা সহকারী ফ্যাক্টচেকার (ফ্যাক্টওয়াচ) শুভাশীষ দীপ।

সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস বিষয়ক জাতীয় কমিটির (এনসিক্যাম) আয়োজিত ওয়েবিনারে মোডারেটর ছিলেন কমিটির সদস্য কাজী মুস্তাফিজ।

ওয়েবিনারে এএইচএম মোহসিন বলেন, ব্যক্তি, রাজনৈতিক গোষ্ঠী, কিংবা সাইবার দুর্বৃত্ত যে কেউ ইন্টারনেটে ভুয়া সংবাদ ছাড়ানোর পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে। আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া অন্যতম উদ্দেশ্য থাকে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর পেছনে। এর মাধ্যমে শুধু সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে তা নয়, যে কেউ সাইবার দুর্বৃত্তদের ছড়ানো ভাইরাসের আক্রমণের শিকার হতে পারেন। এতে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।

মোহাম্মদ কাওছার উদ্দীন বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে কিছু ভুয়া ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে যে এসব তথ্য অসত্য। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্ধু তালিকায় থাকা কেউ তথ্য দিলেও সেটি যাচাই করে সত্যতা নিশ্চিতের আগে প্রচার করা উচিত নয়।

পুলিশের এডিসি মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, মানুষ এখন তথ্যের মধ্যে বসবাস করছে। সেই তথ্য কতটা সঠিক তা জানা জরুরি। ভুয়া তথ্য ছড়ানোর প্রভাব ব্যাপক।

তিনি বলেন, ব্যক্তি, গোষ্ঠী, রাষ্ট্রকে টার্গেট করে ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে। দেশের আইনে ভুয়া তথ্য ছড়ানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এজন্য মামলা গ্রহণ ছাড়াও ভুয়া তথ্য ইন্টারনেট থেকে সরানোর বিষয়ে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

ভুয়া তথ্য যাচাইয়ের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে শুভাশীষ দীপ জানান, নানাভাবে ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়। আগে ছবি দেখা যেত, এখন ভিডিও দেখা যায়। যা দেখে মনে হতে পারে সম্পূর্ণ আসল ভিডিও। মূলত কারিগরি কারসাজিতে ভুয়া ভিডিও তৈরি হচ্ছে, যা ডিপফেইক প্রযুক্তি নামে পরিচিত।

ইন্টারনেটে যেকোনো কিছুতে ক্লিক করার আগে নিজেকে প্রশ্ন করার পরামর্শ দেন তিনি। বলেন, আগে নিজের মনকে জিজ্ঞেস করতে হবে এ তথ্যটি সঠিক না ভুল। তাহলেই সংশ্লিষ্ট বিষয় বিবেচনায় নিয়ে মূল ওয়েবসাইটগুলো যাচাই করলে সঠিক বা ভুল নির্ণয় করা যাবে। তবে অনেক ভুল তথ্যই সাধারণত শনাক্ত করা কঠিন হয়।

কাজী মুস্তাফিজ বলেন, ইন্টারনেটে ছড়ানো বিভিন্ন কনটেন্টের ৮০ শতাংশই নকল বা ভুয়া বলে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান স্টাটিসটার গবেষণায় উঠে এসেছে। ‘দেখা মাত্রই ক্লিক নয়, যাচাই ছাড়া শেয়ার নয়’– এই সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন প্রচারে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

এআর/এমএইচএস