ছুটির দিনের বইমেলা : পাঠকের প্রথম পছন্দ হুমায়ূন
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ প্রয়াত হয়েছেন ২০১২ সালের ১৯ জুলাই। মৃত্যুর প্রায় এক দশক পেরিয়ে গেলেও ভক্ত পাঠকদের কাছে তার জনপ্রিয়তা এখন পর্যন্ত এতোটুকু কমেনি। যেন মনে হয় জীবিত হুমায়ূনের চেয়ে মৃত হুমায়ূন বেশি পরিচিত, বেশি সমাদৃত।
এখনও দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক তিনি। এবারের বইমেলাতেও তার বইগুলোই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে, বলছেন প্রকাশকরা। তাদের মতে, বাজারে কাটতির দিক থেকে হুমায়ুন আহমেদের জায়গা নেওয়ার মতো কোনো লেখক এখনও বাংলাদেশে নেই।
বিজ্ঞাপন
অন্য প্রকাশ, কাকলী, মাওলা ব্রাদার্স, আগামী প্রকাশনী এরকম পরিচিত প্রকাশনীগুলোর স্টলে ক্রেতাদের ছিল উপচেপড়া ভিড়।
বিশেষ করে অন্য প্রকাশের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে পাঠক-দর্শনার্থীদের হুমায়ূনের বই কেনার দৃশ্য এখনও নিয়মিত। এবারও অন্য প্রকাশের স্টলকে সাজানো হয়েছে হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ করে। অন্য প্রকাশের স্টলের ওপরে দেখা যায়, চোখে চশমা, মাথায় টুপি এবং ব্লেজার গায়ে দাঁড়িয়ে আছেন হুমায়ূন আহমেদ। দেখে যে কারোরই মনে হবে, তার ভক্তদের বই কেনা দেখছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
অন্য প্রকাশের স্টল ইনচার্জ তাওহিদুল ইসলাম বলেন, বরাবরের মতোই হুমায়ুন স্যারের উপন্যাস বেশি যাচ্ছে। এর মধ্যে পাঠকদের চাহিদার শীর্ষে আছে প্রেমের উপন্যাস। এর মধ্যে মধ্যান্থ, দেয়াল, জোছনা, জননীর গল্প, মাতাল হাওয়া, বাদসা নান্দার বেশি চলছে।
আরও পড়ুন : হুমায়ূন আহমেদ : গল্প, গদ্য ও জনপ্রিয়তা
অন্য প্রকাশের বিপণন ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজুর রহমান বলেন, অন্যপ্রকাশ ও হুমায়ূন আহমেদ সমার্থক বলতে পারেন। প্রতিবারের মতোই এবারের মেলায় আমাদের বিক্রির তালিকায় তার বই শীর্ষে। প্রথম সারির লেখকদের মধ্যে তিনিই এগিয়ে। তার ধারেকাছেও কেউ নেই।
কাকলী প্রকাশনীর প্রকাশক নাসির আহমেদ সেলিম বলেন, যা চলছে তা সবই হুমায়ূন আহমেদের বই। অন্যান্য বইয়ের প্রতি পাঠকদের আগ্রহ অনেক কমই। আর আমাদের স্টলে মূলত পাঠকরা হুমায়ূন আহমেদের বই কেনার জন্যই আসেন।
ছুটির দিনে জমজমাট অমর একুশে বইমেলা
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মানুষের ঢল নেমেছে অমর একুশে বইমেলায়। স্টল-প্যাভিলিয়নগুলোতেও বেড়েছে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড়। আজ ছুটির দিন হওয়ায় মেলা শুরু হয়েছে বেলা ১১টায়। চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। তাই সকাল থেকে শুরু হয়েছে বইপ্রেমীদের আনাগোনা। স্টলে স্টলে ঘুরে বইয়ের মলাট উল্টে পাল্টে দেখে-কিনে সুন্দর সময় পার করেছেন তারা। শিশু প্রহর থাকায় শিশুচত্বরও শিশুদের কলকাকলীতে মুখরিত ছিল।
মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, ছুটির দিন বিকেলে প্রাণের মেলায় প্রত্যেকেই বই কেনার চেয়ে ঘুরে ঘুরে বই দেখার প্রতিই মনোযোগী বেশি। মেলার শুরু থেকেই প্রত্যাশিত সাড়া পাওয়ায় খুশি লেখক ও প্রকাশকরা। তারা বলছেন, আজ মেলায় জনসমাগম বেশ ভালো দেখা যাচ্ছে। বইপ্রেমীরা আসছেন, বই দেখছেন। সংখ্যায় কম হলেও বই কিনছেন অনেকেই।
স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে অনেকটা অবহেলা দেখা গেছে মেলায়। প্রতিটি প্রবেশ গেটে দর্শনার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা মেপে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং মাস্ক নিশ্চিতসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রবেশের বিষয়টিতে জোর হলেও মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশের পর তা মানার ক্ষেত্রে উদাসীনতা লক্ষ্য করা গেছে।
বিভিন্ন প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মীরা জানান, এবার মেলায় প্রতিদিনই পাঠকদের ভালো উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ছুটির দিনে তা ছাড়িয়ে যায় অন্য দিনগুলোকে। ছুটির দিন বিবেচনায় দর্শনার্থী-পাঠকের চাহিদা মেটাতে প্যাভিলিয়ন ও স্টলে যথেষ্ট বই মজুদ রাখাসহ সব প্রস্তুতি ছিল।
বইমেলায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের হাতে বই তুলে দিল বিকাশ
গত বছর করোনার কারণে বই মেলায় ঘুরতে আসা না হলেও এবার বইমেলায় এসেছে মিরপুরের অভিযাত্রিক স্কুলের বেশ কিছু শিক্ষার্থী। স্কুলের উদ্যোগে বইমেলায় ঘুরতে এসে বিকাশের কাছ থেকে ৫টি করে গল্পের বই পেয়ে ওদের সবার সময়টা কেটেছে আনন্দে।
গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও বইমেলা উপলক্ষে বিকাশের উদ্যোগে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্কুল, কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাঠাগার, বৃদ্ধাশ্রমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরিতে বই দেওয়া হবে। মেলায় আসা ক্রেতা-পাঠক-লেখক-দর্শনার্থীদের দেওয়া বই, দেশজুড়ে বিকাশ গ্রহকসেবা কেন্দ্র, সুপার শপগুলোতে গ্রাহকদের প্রদান করা বই এবং বিকাশের পক্ষ থেকে দেওয়া বইগুলোকেই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এই লাইব্রেরিগুলোতে বিতরণ করা হবে।
এরই অংশ হিসেবে শুক্রবার বিকেলে মেলায় আসা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের হাতে বইগুলো তুলে দেওয়া হয়। এসময় বিকাশের হেড অফ লিগ্যাল মাজেদুল ইসলাম ও জনপ্রিয় অভিনেত্রী অপি করিম উপস্থিত ছিলেন।
অপি করিম বিকাশ এবং অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য তারা যে উদ্যোগটি নিয়েছে তা নিঃসন্দেহে মহতী উদ্যোগ। তাদের মধ্যে পড়ার অভ্যাস তৈরি করার কাজটি করছে তারা। এটি আমাদের জন্য বড় একটি উদাহরণ। সুবিধাবঞ্চিতসহ সব শিশুদের বলব বেশি বেশি বই পড়তে হবে। বই পড়ার বিকল্প নেই।
বিকাশের হেড অফ লিগ্যাল মাজেদুল ইসলাম বলেন, গত দুই বছরের মতো এবারো আমরা আরও বড় পরিসরে বই সংগ্রহ করছি এমন শিশুদের জন্য। তাই আপনাদের সবার প্রতি আহ্বান থাকবে মেলায় এসে এসব সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য বই প্রদান করে তাদের মেধা, মনন বিকাশে ভূমিকা রাখবেন। পাশাপাশি সব পাঠকের বই কেনার আনন্দ বাড়িয়ে দিতে সবার জন্য বিকাশ পেমেন্ট ১০ শতাংশ ১৫০ টাকা পর্যন্ত ক্যাশব্যাকও দিচ্ছি আমরা।
শুক্রবার (৪ মার্চ) অমর একুশে বইমেলার ১৮তম দিন। মেলা চলে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মেলায় ছিল শিশুপ্রহর। আজ নতুন বই এসেছে ২২০টি।
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ : গাজীউল হক ও সিকান্দার আবু জাফর শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নাসির আহমেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আমিনুর রহমান সুলতান, আলফ্রেড খোকন এবং তারেক রেজা। সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর।
এইচআর/এসএম