চক্রটির টার্গেট চাকরিপ্রত্যাশী যুবক
সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে একটি চক্রের ১৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে র্যাব-২ এর একটি দল।
গ্রেপ্তাররা হলেন, শামীম হোসেন, রেবেকা সুলতানা, মো. ওমর ফারুক, শহিদুল ইসলাম, মো. ইমরান, শরীফুল ইসলাম, আল আমিন, কাজী হাবিব, মাহাবুবুর রহমান ওরফে সরোয়ার, রুবেল শেখ, আব্দুল মতিন, সাইফুল ইসলাম ভূইয়া, রফিকুল ইসলাম খোকা।
বিজ্ঞাপন
গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে তিনটি অফিস আদেশ, তিনটি আবেদন ফরম, বিভিন্ন ব্যাংকের চারটি চেক, তিনটি চেকের ফটোকপি, আটটি খালি ও সই করা স্ট্যাম্প, আট সেট জীবনবৃত্তান্ত, রাষ্ট্রীয় কার্যে ব্যবহার্য লেখা দুটি খাম, নগদ ৮৪ হাজার ৪০০ টাকা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, বিভিন্ন লোকের পাসপোর্ট, ই-ভিসার ছবি, ২২টি মোবাইল ফোনসহ প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব-২ অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আবু নাঈম মো. তালাত জানান, সংঘবদ্ধ একটি প্রতারক চক্র বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অভিনব কৌশলে চাকরিতে নিয়োগের বিভিন্ন প্রক্রিয়া যেমন- সাক্ষাৎকার, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, নিয়োগপত্র, প্রশিক্ষণ দেওয়া ইত্যাদি সম্পন্ন করে গ্রামের সহজ-সরল চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে প্রতারণাপূর্বক লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণসহ র্যাব-২ এ অভিযোগ করেন। চার ভুক্তভোগী এ বিষয়ে পল্লবী থানায় পৃথক পৃথক চারটি মামলা দায়েরের পর র্যাব-২ গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ায়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তাররা রাজধানীর পল্লবীতে অফিস স্থাপন করে দেশের বিভিন্ন এলাকার চাকরি প্রত্যাশীদের টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে নিয়োগের কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন। চক্রটির সদস্য সংখ্যা প্রায় ৪০-৫০ জন। তাদের বড় একটি অংশ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে।
চক্রটি মোট তিনটি ধাপে তাদের প্রতারণা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রতারক চক্রের প্রাথমিক স্তরের সদস্যরা টাকার বিনিময়ে চাকরির আশ্বাস দিয়ে তরুণদের প্রলুব্ধ করত। গ্রামের সহজ-সরল চাকরিপ্রত্যাশী তরুণরা প্রতারক চক্রের প্রলোভনে জমিজমা বিক্রয়, ধার-কর্জ করে টাকা জোগাড় করে ঢাকায় আসত।
ঢাকায় আসার পর প্রতারক চক্রের দ্বিতীয় স্তরের সদস্যরা তাদের দায়িত্ব নিতেন। দ্বিতীয় স্তরের সদস্যরা তরুণদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য বিভিন্ন প্রক্রিয়ার আয়োজন করতেন। এসব প্রক্রিয়া শেষে তাদের নিয়োগপত্রসহ আনুষঙ্গিক নথিপত্র সরবরাহ করা হতো।
বিশেষ কিছু চাকরির ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্তরের কয়েকজন সদস্য সুনির্দিষ্ট কিছু ভূমিকা পালন করতেন। যেমন, সেনাবাহিনীর ‘মেস ওয়েটার’ পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য তাদের একজন নিজেকে সিনিয়র মেস ওয়েটার হিসেবে পরিচয় দিতেন এবং কৌশলে সেনানিবাসের আশেপাশে বিভিন্ন এলাকার কমিউনিটি সেন্টারে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করিয়ে তাদের বলতেন প্রশিক্ষণ চলছে।
তৃতীয় স্তরের সদস্যরা বিভিন্ন কার্যক্রমে নিজেদের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে অথবা ক্ষেত্র বিশেষে উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তার নিকটাত্মীয় পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীদের বিশ্বাস জোরদার করতে কাজ করতেন। টাকা হাতিয়ে নেয়ার মূল কাজটি করতেন প্রতারক চক্রের প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরের সদস্যরা।
ভুক্তভোগীদের বিশ্বাস অর্জনসহ সবস্তরের সঙ্গে সমন্বয় এবং কমিশন বণ্টনের দায়িত্ব পালন করতেন প্রতারক চক্রটির তৃতীয় স্তরের সদস্যরা। তারা ভুয়া বা জাল নিয়োগপত্রসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র তৈরি করে প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলো দ্বিতীয় স্তরের সদস্যদের সরবরাহ করতেন।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, প্রতারক চক্রটির প্রাথমিক স্তরের ২০-২৫ জন সদস্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছেন। দ্বিতীয় স্তরে ১০-১৫ জন ও তৃতীয় স্তরে ৫-৬ জন রয়েছেন। ৪০-৫০ জনের এ প্রতারক চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে অভিনব বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি এড়িয়ে তাদের প্রতারণামূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন।
নিয়োগ ছাড়াও চক্রটি বিপন্ন প্রাণী তক্ষক, প্রাচীন মুদ্রা, স্বর্ণের বার, ম্যাগনেটিক পিলার, সাপের মণি, মানব পাচার ইত্যাদি বিষয়েও নিরীহদের প্রতারিত করে আসছিল। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
জেইউ/আরএইচ