ব্রিটিশ সরকার ঘোষিত ‘ইউক্রেন ফ্যামিলি স্কিম ভিসা’ ও ’লোকাল স্পন্সর স্কিম ফর ইউক্রেন’ এই দুটি ক্যাটাগরিতে শরণার্থীরা ব্রিটেনে আশ্রয়ের আবেদন করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন ব্রিটিশ আইনজীবীরা।

পরিবারের সদস্য ক্যাটাগরিতে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত কোনো ব্রিটিশ নাগরিক তার বাবা-মা, স্বামী বা স্ত্রীকে স্পন্সর করতে পারবেন। অন্যদিকে নিকটাত্মীয়দের মধ্যে ১৮ বছরের বেশি বয়সী ক্যাটাগরিতে বাবা-মা বা স্বামী-স্ত্রীর দাদা-দাদি বা নানা-নানি, ভাই-বোন, মামা-মামি, খালা-খালু, জেঠা-জেঠি, ফুফা-ফুফু, মামাতো বা চাচাতো ভাই-বোন এমনকি শ্বশুর-শাশুড়ির মাধ্যমেও যুক্তরাজ্যে আশ্রয় পেতে আবেদন করা যাবে বলে দিক নির্দেশনা প্রকাশ করেছে ব্রিটেনের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ।

মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যুক্তরাজ্যে বসবাসরত অ্যালামনাইদের সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ইউকে আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনায় এ তথ্য তুলে ধরেন যুক্তরাজ্যের অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা।

ব্রিটিশ মানবাধিকার আইনজীবী ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, ইউক্রেনে ক্ষতিগ্রস্ত কোনো বাংলাদেশি যদি কোনোভাবে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করে শরণার্থী হিসেবে আবেদন করেন, তাহলে তার ভিসা আবেদন গ্রহণের সম্ভাবনা তৈরি হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ইউকে পরিচালনা পরিষদের সদস্য ব্যারিস্টার চৌধুরী হাফিজুর রহমান বলেন, যেসব বাংলাদেশির ইউক্রেনের নাগরিকত্ব রয়েছে তারা বিজনেস ও লোকাল স্পন্সর ক্যাটাগরিতে যুক্তরাজ্যে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

যেসব ব্রিটিশ নাগরিক তাদের বাড়িতে ইউক্রেনের শরণার্থীদের আশ্রয় দেবেন তাদের প্রতি মাসে ৩৫০ পাউন্ড করে আর্থিক সহায়তা দেবে ব্রিটিশ সরকার।

তবে আইনজীবী ফজলে এলাহী বলেন, এর আগে আফগান ও সিরিয়া আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য যুক্তরাজ্য সরকার ৫ বছর মেয়াদি রিফিউজি স্কিমের ব্যবস্থা করলেও ইউক্রেনীয়ানদের জন্য ৩ বছর মেয়াদি বিশেষ ভিসার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। যেহেতু আবেদনকারীরা ইউএনএইচসিআর এর মাধ্যমে শরণার্থী হিসেবে আবেদন করছেন না, তাই ভবিষ্যতে তাদের যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে থাকার বিষয়টি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে পারে। তবে সব কিছু পরিষ্কার হতে আরো কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন এই আইনজীবী।

ভার্চুয়াল কাউন্সিলিং সেশনে ইউক্রেনে যুদ্ধ বিধ্বস্ত এলাকায় মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশিদের স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ দিয়েছেন ইম্পেরিয়াল কলেজ অব লন্ডনের ক্লিনিক্যাল লেকচারার ডা. মঞ্জুর শওকত ও বেলফাস্টের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. জিন্নাত খান।

ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া একাত্তর টেলিভিশনের সাংবাদিক তানভীর আহমেদ পোল্যান্ড সীমান্তে বাংলাদেশি অভিবাসীদের সঙ্গে কথা বলার সময় বাংলাদেশি শরণার্থীদের আইনি ও মানবিক সহায়তার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করেন এবং পরে বিষয়টি পোল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেনের নজরে আনেন।

দেড় শতাধিক শরণার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাংবাদিক তানভীর আহমেদের কাছে অভিবাসন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি সহযোগিতার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের যুক্তরাজ্যে বসবাসরত অ্যালামনাইরা ইউক্রেনফেরত বাংলাদেশিদের অনলাইনে অভিবাসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সহায়তা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করলে ভার্চুয়াল এই পরামর্শ সভাটির আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ইউকে।

অনুষ্ঠানটির চেয়ার থার্ড সেক্টর কনসালট্যান্ট বিধান গোস্বামী যুদ্ধের ভয়বহতা বর্ণনা করে বলেন, আমরা দেখেছি মুক্তিযুদ্ধের সময় কীভাবে নির্মমভাবে নারী-পুরুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছিলে। এই সব স্মৃতি আমাদের বেদনা দিয়েছে, আজও দিচ্ছে। ইউক্রেন-রাশিয়ার সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশি অভিবাসী ও শিক্ষার্থীদের মানবিক সহায়তায় পাশে দাঁড়াতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ইউকের এই আয়োজন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাইদের অবস্থান নির্যাতিত মানুষের পক্ষে, বলেন তিনি।

ভার্চুয়াল আলোচনায় ইউক্রেন থেকে যুক্ত হয়েছিলেন সেদেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের অনারারি কাউন্সিলের উপদেষ্টা মাহবুব আলম, পোল্যান্ডের ওয়াশর সিটি কাউন্সিলর মাহবুব সিদ্দীকী, পোল্যান্ডের পিএইচডি গবেষক ও শিক্ষাবিদ হোসেন আলম ও বিদেশে উচ্চ শিক্ষা বিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এএইচজেড অ্যাসোসিয়েটস এর পরিচালক গোলাম মতুর্জাসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ইউকে'র ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য ফাতেমা লিলি ও শিল্পী মাসুদ মিজানসহ অন্যরা।

পরামর্শ সভায় ইউক্রেন ফেরত প্রায় অর্ধশতাধিক বাংলাদেশি অভিবাসী যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের অভিবাসন ও উচ্চ শিক্ষা বিষয়ক প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেয়।

জেডএস