অল্প সময়েই করোনা নিয়ন্ত্রণ করেছে বাংলাদেশ : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
করোনার টিকাদান বিষয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক/ ছবি: ঢাকা পোস্ট
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ইউরোপ-আমেরিকার তুলনায় বাংলাদেশ সফল বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেছেন, ‘উন্নত দেশগুলো যেখানে করোনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে, বাংলাদেশ সেখানে খুব অল্প সময়েই করোনাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। ফলে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিতও হয়েছে।’
বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএমসিএ) উদ্যোগে ‘জাতীয় করোনা টিকাদান কার্যক্রম ও বেসরকারি খাতের সম্পৃক্ততা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিপিএমসিএ-এর সভাপতি এম এ মুবিন খান।
বিজ্ঞাপন
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক মাকড়সার জাল দিয়ে একটা সিংহে আটকে রাখা যায়, সেভাবে আমরা সবাই মিলে করোনাকে আটকে ফেলেছি। এটা সবার সহযোগিতায় সম্ভব হয়েছে। দেশে করোনা টিকাদান শুরু হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে ৭০ লাখ টিকা মজুত আছে। এর মধ্যে দুই লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। তাদের সবাই সুস্থ আছেন। কিছু লোকের সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে, এটা তেমন কিছু নয়।’
বিজ্ঞাপন
টিকাদানে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘করোনা টিকাদান কর্মসূচিতে অংশ নিতে আপনারা দাবি জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখা হাসিনার অনুমতিক্রমে বেসরকারি পর্যায়ের টিকা দিতে পারবেন। এটা ব্যবস্থা আমরা করব।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘এর জন্য সরকারের সঙ্গে আমরা আলোচনা করব, এটা নীতিমালা তৈরি করে, ঔষধ প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে এটার ব্যবস্থা করব। দেশে ৬০ শতাংশ উন্নয়ন অবদান রাখে বেসরকারি খাত। সেই ক্ষেত্রে করোনা নিয়ন্ত্রণে যেমন ভূমিকা রেখেছে, টিকাদান কর্মসূচিতে ও অবদান রাখবে।’
অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সময়ে সরকারের দেওয়া প্রণোদনা ছিল একটি বিশাল সিদ্ধান্ত। আমিও প্রণোদনা পেয়েছি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘সময়মতো করোনার প্রণোদনা ঘোষণা করার কারণেই অর্থনীতির সব খাত ইতোমধ্যে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। মহামারির সময়ে অর্থনীতি টিকিয়ে রাখতে এর কোনো বিকল্প ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘আমি টিকা নিয়েছি, মন্ত্রণালয়ের সবাই টিকা নিয়েছেন। টিকার কোনো সমস্যা নেই। সরকারের এখন যে ছয় কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, কিন্তু দেশের ১৬ কোটি মানুষকেই টিকা না দিতে পারলে সংক্রমণের শঙ্কা থেকেই যায়। এক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে টিকা কার্যক্রমে যুক্ত করে নিলে সহজভাবে সবাইকেই টিকা দেওয়া সম্ভব হবে। টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে বয়স কমিয়ে ৪০ করা হয়েছে। আমি মনে করি, ১৮ বছরের নিচেও টিকা দেওয়ার বিষয়ে গবেষণা হওয়া উচিৎ। তারাও আক্রান্ত হচ্ছে।’
টিকাদানে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএমসিএ) সাধারণ সম্পাদক ডা. আনোয়ার হোসেন খান বলেন, ‘কোভিড মহামারির শুরু থেকেই সরকারি নির্দেশে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলো ২৪ ঘণ্টা চালু রেখে নিরলসভাবে কোভিড আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে। তাছাড়া আরটি-পিসিআর ল্যাবের মাধ্যমে বেসরকারি হাসপাতালগুলো লাখ লাখ কোভিড রোগীদের নমুনা পরীক্ষা করছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যভুক্ত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলো বিদেশগামী যাত্রীদের কোভিডমুক্ত সনদ দিচ্ছে। কিন্তু গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকারি পর্যায়ে কোভিড টিকাদান কার্যক্রম শুরু হলে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতকে টিকাদান কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এটা দুঃখজনক।’
আনোয়ার হোসেন খান আরও বলেন, ‘সর্বসাধারণের সুবিধার্থে অ্যাসোসিয়েশন থেকে ২০টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টিকাদান কেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে টিকা দিতে যৌক্তিক মূল্যমান সরকার থেকে নির্ধারণ করে দেওয়ার জন্য প্রস্তাবও উপস্থাপন করেন তিনি।’
সংগঠনের সভাপতি এম এ মুবিন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বিপিএমসিএর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, ইস্ট-ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান ও বিপিএমসিএ-এর সাবেক সভাপতি ও বিপিএমসিএ-এর সদস্য ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, অর্থ সম্পাদক মো. হাবিবুল হক, যুগ্ম সম্পাদক ও ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান প্রীতি চক্রবর্তী প্রমুখ।
টিআই/এফআর