শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে ধর্ষণবিরোধী সমাবেশ /ছবি- ঢাকা পোস্ট

সারাদেশে অব্যাহতভাবে ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতার সঙ্গে যুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা, পাহাড়-সমতলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নারীদের ওপর সব ধরনের যৌন ও সামাজিক নিপীড়ন বন্ধ করাসহ ৯ দফা দাবিতে ধর্ষণবিরোধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিভিন্ন সংগঠনের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনবিরোধী প্লাকার্ড হাতে এ সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন।

শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ এর ব্যানারে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।  সমাবেশ মঞ্চে ধর্ষণবিরোধী সাংস্কৃতিক পরিবেশনারও আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসিরুদ্দিন প্রিন্সের সভাপতিত্বে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এ আকাশ, সামিনা লুৎফা, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি আল কাদেরী জয়সহ অন্যান্য নেতাকর্মী।

সমাবেশে ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন নাসির উদ্দিন প্রিন্স। দাবিগুলো হল- সারাদেশে অব্যাহতভাবে ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতার সঙ্গে যুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা, পাহাড়-সমতলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নারীদের ওপর সামরিক-বেসামরিক সকল প্রকার যৌন ও সামাজিক নিপীড়ন বন্ধ করা, হাইকোর্টের নির্দেশানুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে নারী নির্যাতন বিরোধী সেল কার্যকর করা, ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইন ১৮৭২-১৫৫ (৪) ধারা বিলোপ করা, অপরাধ বিজ্ঞান ও জেন্ডার বিশেষজ্ঞদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অন্তর্ভুক্ত করা, তদন্তকালীন ভিকটিমকে মানসিক নিপীড়ন-হয়রানি বন্ধ করা, ধর্মীয়সহ সব ধরনের সভা-সমাবেশে নারী বিরোধী বক্তব্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা, পাঠ্যপুস্তকে নারীর প্রতি অবমাননা ও বৈষম্যমূলক যেকোনও প্রবন্ধ, নিবন্ধ, পরিচ্ছদ, ছবি, নির্দেশনা ও শব্দচয়ন পরিহার করা এবং গ্রামীণ সালিশের মাধ্যমে ধর্ষণের অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা।

সভাপতির বক্তব্যে প্রিন্স বলেন, দেশব্যাপী ধর্ষণবিরোধী এ জাগরণের মধ্যেই ধর্ষণের মাত্রা, তীব্রতা ও ভয়াবহতা অন্য যেকোনও সময়কে ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই ৮ থেকে ১০টি ধর্ষণের খবর আসছে। এরকম নানা বীভৎস খবর প্রতিদিনই পত্রিকার পাতা জুড়ে থাকছে। আইনের রক্ষক থেকে শুরু করে ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত ছাত্র-যুব-আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ও তাদের প্রশ্রয়ে থাকা সন্ত্রাসীরাই বেশিরভাগ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত বলে প্রতীয়মান। ধর্ষণের বিরুদ্ধে ৯ দফা দাবি নিয়েই আজকের এ সমাবেশ। আমাদের এ আন্দোলন মাত্র শুরু হলো। যতদিন না ধর্ষণ ও নারী নিপীড়ন বন্ধ না হচ্ছে এবং আমাদের দাবিগুলো মেনে না নেওয়া হচ্ছে, ততদিন এ আন্দোলন চলবে।

সমাবেশে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের যে পরিসংখ্যান আমরা দেখতে পাই, তার চেয়ে দ্বিগুণ ঘটনা আমাদের দেশে ঘটছে। ধর্ষণবিরোধী এ আন্দোলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক। এ আন্দোলনকে অন্যান্য আন্দোলনের সঙ্গে মিলিয়ে ফেললে হবে না। সব রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে সংগঠিত করে সারাদেশে এ আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে হবে। ধর্ষণ ও নারী নিপীড়ন কমাতে হলে সব ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। সর্বোপরি নারীদের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় আমাদের একযোগে কাজ করতে হবে।

নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত বলেন, এ আন্দোলন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন। আল জাজিরার প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে যেভাবে সরকার আন্দোলন করছে, সেভাবে ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলছে না, আন্দোলন করছে না। ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সরকার কথা বলবে না, যা করতে হবে আমাদেরই করতে হবে।  

আরএইচ/ওএফ