গত দুই বছর করোনার কারণে রাজধানীতে ইফতারির দোকানের সংখ্যা তুলনামূলক কম ছিল। তবে এ বছরে অভিজাত ইফতারির দোকানের পাশাপাশি পাড়া মহল্লায় দোকানের সংখ্যাও অনেক বেড়েছে। দোকান বাড়লেও এ বছর বিক্রি বাড়েনি বলে দাবি ইফতারি বিক্রেতাদের।

তারা বলছেন, এ বছর অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ইফতারি তৈরিতে গত বছরের তুলনায় খরচ বেশি পড়ছে। এ জন্য বেশি দামে ইফতার পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে। তাই ইফতারির প্রধান আকর্ষণ ভাজা-পোড়া বিক্রির পরিমাণও অনেক কমে গেছে। অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনা করে অনেকই ভাড়া-পোড়া কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন।

শুক্রবার রাজধানীর মালিবাগ, মৌচাক, মগবাজার, শান্তিনগর, খিলগাঁও, রামপুরা, বনশ্রী, বাড্ডাসহ বেশ কিছু এলাকার পাড়া মহল্লার ইফতারির দোকান ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে।

মালিবাগ এলাকার চৌধুরীপাড়া মহল্লার দোকানি সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ বছর ইফতারি বিক্রির পরিমাণ অনেক কমেছে। কারণ কাঁচামালের দাম বেশি হওয়া ইফতারি সামগ্রী তৈরিতে খরচ বেশি পড়ছে। তাই বাজারে ইফতারির দামও বেড়েছে। যে কারণে আমরা বাধ্য হচ্ছি অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি দামে ইফতারি বিক্রি করতে। আর দাম বেশি হওয়ার কারণে আগে যে ক্রেতা ১০টা বেগুনি, পেঁয়াজু বা অন্য কোনো ভাজা-পোড়া আইটেম নিতেন এবার সেই ক্রেতা ৫-৬টি নিচ্ছেন। ফলে ভাজা-পোড়া আগের চেয়ে তুলনামূলক কম বিক্রি হচ্ছে।

গুলশান বাড্ডা লিংক রোডের অস্থায়ী একটি দোকানের ব্যবসায়ী বেলাল হোসেনও এ কথা স্বীকার করে বলেন,
এবার আসলেই দাম বেশি, প্রতিটি জিনিস কেনা পড়ছে বেশি, তাই বিক্রি করতেও হচ্ছে বেশি দামে। দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি মানুষ আগের চেয়ে বেশি স্বাস্থ্য সচেতন হওয়ায় ভাজা-পোড়া বিক্রি কমে গেছে। বেগুনি, পেঁয়াজু, হালিম, জিলাপি, আলুর চপ, ছোলাসহ সব পণ্যেরই দাম বেড়েছে।

পাশের গলিতে মা নামে একটি খাবার হোটেলে অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি অস্থায়ীভাবে ইফতারি বিক্রি হয়। হোটেলটির মালিক টুটুল আহমেদ বলেন, এ বছর দাম বাড়ার কারণে ভাজা-পোড়া বিক্রি কমেছে। প্রথম ২-৩ দিন ইফতারির ভাজা-পোড়া বেশি করে বানিয়ে পরে সেগুলোর সব বিক্রি হয়নি, কিছু নষ্ট হয়েছে কিছু ইফতারির পর কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে। অন্যান্য বছর যে পরিমাণ ইফতারি বিক্রি করেছি এ বছর সেই তুলনায় বিক্রির পরিমাণ কমেছে। দাম বেশি হওয়ার কারণে মানুষ কেনার পরিমাণ কমিয়েছে।

উত্তর বাড্ডা এলাকায় ইফতারি কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী ফিরোজ আহমেদ বলেন, মানুষ ইফতারিতে আগের মতো আর ভাজা-পোড়া খায় না। আমরাও ইফতারিতে ভাজা-পোড়া বাদ দিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত খাওয়া শুরু করেছি। এছাড়া সব ধরনের ইফতারির দাম আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে। তাই যে আগে ১০ রকমের ভাজা-পোড়া কিনত সেই ক্রেতাই ভাজা পোড়া কমিয়ে অর্ধেক কিনেন। যে কারণ দোকানিদের ভাজা-পোড়া ইফতারির আইটেম হিসেবে কম বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর বেইলি রোড ঘুরে দেখা গেছে, অভিজাত পরিচ্ছন্ন আর সুস্বাদু ইফতারির জন্য নামকরা এ বেইলি রোডে এবার অন্যান্য সব স্বাভাবিক ইফতারির ছাড়াও চিকেন ঝাল ফ্রাই বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকা কেজি, চিকেন ফুল রোস্ট ৬৫০ টাকা, চিকেন রোস্ট পিস ১৭৫, বিফ কালা ভুনা ১০০০ থেকে ১৪০০ টাকা কেজি। মাটন লেগ ফ্রাই ৫৫০ টাকা, গরুর স্পেশাল তেহারি ৩৩০ টাকা, মোরগ পোলাও ২৩০, চিকেন রোল ৮০ টাকা, হালিম পাত্রের আকার ভেদে ৪০০ থেকে ১২০০ টাকা।

সেই সঙ্গে বেইলি রোডে রেশমি জিলাপি ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া গরুর রেজালা ১৩০০ টাকা কেজি, চিকেন সাসলিক ১৪০ টাকা, ফালুদা বড়া ৩০০, দইবড়া ৩০০ টাকা, চিকেন চাপ ১৬০, বিফ চাপ ১৮০ থেকে ২০০, চিকেন টিক্কা ২৫০, মাটন বটি কাবাব ২০০ এছাড়া চিকেন বিরিয়ানি ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এএসএস/এসকেডি