ঋতুরাজের হাত ধরে এলো ভালোবাসার দিন
বাতাসে বসন্তের আগমনী বার্তা। প্রকৃতি খুলেছে তার দখিনা দুয়ার। প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে বিদায় নিয়েছে শীত। ঋতুরাজ বসন্ত তার নিজস্ব উষ্ণতায় প্রাণসঞ্চার করছে, ফাল্গুনের হাওয়া দোল খাচ্ছে প্রকৃতিতে। মৌমাছিদের গুঞ্জরন, কোকিলের কুহুতান, গাছে গাছে পলাশ আর শিমুলের রঙের মেলা। সব মিলিয়ে প্রকৃতি জানান দিচ্ছে, বসন্ত এসে গেছে।
আজ পহেলা ফাল্গুন। ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। ফাল্গুনের হাত ধরেই ঋতুরাজ বসন্তের আগমন। ঋতুরাজকে স্বাগত জানাতে প্রকৃতি আজ বর্ণিল সাজে সেজেছে। সেই সঙ্গে ভালোবাসার গানে, ভালোবাসার অনুভূতির কাছে নিজেকে সঁপে দিতে একইদিনে এসেছে ভালোবাসা দিবস। ঋতুরাজের হাত ধরে এসেছে ভালোবাসার দিনটি। বসন্ত আর ভালোবাসার বহুমাত্রিক রূপ-সৌরভে ভরপুর চারদিক। যার মাধ্যমে জীর্ণতাকে সরিয়ে ফুলে ফুলে ভরে উঠবে জীবন। গত বছরও ভালোবাসা দিবসেই পালিত হয়েছিল পহেলা ফাল্গুন। বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, এর আগে বসন্তের প্রথম দিন অর্থাৎ পহেলা ফাল্গুন ছিল ১৩ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধনের পর একই দিনে এবারও পড়েছে বসন্ত উৎসব আর ভালোবাসা দিবস।
বিজ্ঞাপন
আজ পহেলা ফাল্গুন
ফুলে ফুলে ভ্রমরের খেলা। গাছে গাছে পলাশ আর শিমুলের মেলা। সব মিলিয়ে প্রকৃতি জানান দিচ্ছে, আজ পহেলা ফাল্গুন। সেই সঙ্গে তরুণ-তরুণীদের মাঝে বসন্ত বরণের উচ্ছ্বাস। ফাগুনের আগুনে, মন রাঙিয়ে বাঙালি তার দীপ্ত চেতনায় উজ্জীবিত হচ্ছে আজ। বাসন্তী রঙের শাড়ি, কপালে টিপ, হাতে চুড়ি, পায়ে নূপুর, খোঁপায় ফুল অথবা রিং জড়িয়ে আজ বেরিয়ে পড়বে তরুণীর দল। প্রকৃতির সাথে নতুন সাজে সাজবে তারাও। তাদের উচ্ছ্বাস মনে করিয়ে দেয় কবির কবিতার লাইন ‘ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক, আজ বসন্ত’।
বিজ্ঞাপন
বসন্ত উৎসবের আয়োজন
জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদের বসন্ত বরণের আয়োজনটি এবার স্বল্প পরিসরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে। যদিও প্রতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে এটি অনুষ্ঠিত হত। এবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বেলা ১০টা পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে চলবে বসন্ত উৎসবের আয়োজন।
বিকেল সাড়ে ৩টায় গেণ্ডারিয়ার সীমান্ত গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণ, উত্তরার আজমপুর প্রাইমারি স্কুল মাঠেও বসন্ত উৎসবের আয়োজন করেছে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ। এছাড়া বিকাল ৪টায় শিল্পকলা একাডেমির নন্দনমঞ্চে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করেছে শিল্পকলা একাডেমি।
যে কারণে একই দিনে পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস
প্রতিবার ১৩ ফেব্রুয়ারি বসন্ত উৎসব পালিত হত। কিন্তু গত বছর বাংলা একাডেমির সংশোধিত বাংলা বর্ষপঞ্জি প্রকাশ করে। ওই পঞ্জি অনুযায়ী, বসন্ত উৎসব গতবার থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি পালিত হচ্ছে। এবারও একইভাবে ১৪ ফেব্রুয়ারি পালিত হচ্ছে পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস। ইংরেজি বর্ষপঞ্জির ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালন করা হয় সারা বিশ্বে। তাই বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধনের পর একই দিনে পড়েছে দিবস দুটি।
বাংলা একাডেমির তথ্য অনুসারে, সংশোধিত বর্ষপঞ্জিতে বৈশাখ থেকে আশ্বিন পর্যন্ত প্রথম ছয় মাস ৩১ দিন, কার্তিক থেকে মাঘ মাস ৩০ দিন এবং ফাল্গুন মাস ২৯ দিন ধরে গণনা করা হবে। তবে গ্রেগরীয় পঞ্জিকার অধিবর্ষে (লিপ ইয়ার) ফাল্গুন মাস ২৯ দিনের পরিবর্তে ৩০ দিন গণনা করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাই সেভাবেই সাজানো হয়েছে নতুন বাংলা বর্ষপঞ্জি। যে কারণে বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধনের পর একই দিনে পড়েছে বসন্ত উৎসব আর ভালোবাসা দিবস।
যেভাবে উদযাপন শুরু হলো ‘বসন্ত উৎসব’
প্রাচীন আমল থেকেই বাঙালি বসন্ত উৎসব পালন করে আসছে। হিন্দুদের পৌরাণিক উপাখ্যান ও লোককথাগুলোতে এই উৎসবের উল্লেখ পাওয়া যায়। হিন্দু বৈষ্ণবরা এটি বেশ আয়োজনের সঙ্গে পালন করেছেন। জানা গেছে, সম্রাট আকবর বাংলা বর্ষপঞ্জি হিসেবে আকবরি সন প্রবর্তন করেন। সে সময় তিনি প্রতি বছর ১৪টি উৎসব পালনের রীতিও প্রবর্তন করেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল বসন্ত উৎসব।
১৯০৭ সালে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট ছেলে শমীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরে শান্তিনিকেতনে যাত্রা শুরু করে বসন্ত উৎসব, যা ‘ঋতুরঙ্গ উৎসব’ নামে পরিচিত। ১৪০১ বঙ্গাব্দে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকায় শুরু হয় বসন্ত উৎসব।
ঋতুরাজের হাত ধরে এলো ভালোবাসার দিন
দ্বিতীয়বারের মত এবার ঋতুরাজের হাত ধরে এসেছে ভালোবাসা দিবস। আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। ভালোবাসা ক্ষণিকের নয়। ভালোবাসা চিরন্তন। ভালোবাসা শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার নয়- শুধু স্বামী-স্ত্রীর নয়, এই ভালোবাসা বয়সের ফ্রেমে বাঁধা নয়, এটা প্রসারিত হয় বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতজনসহ সবার মাঝেই। তবে ভালোবাসা দিবস যুগলদের মনের উচ্ছ্বাসকে বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ। ভালোবাসার গানে, ভালোবাসার মহানুভূতির কাছে নিজেকে নিশ্চিন্তে সঁপে দিতেই ভালোবাসার বিশেষ দিবস, ভালোবাসা দিবস। পৃথিবীব্যাপী আজকের এই দিনটি সব যুগলের জন্যই বিশেষ।
বাংলা একাডেমির সংস্কার করা বর্ষপঞ্জির হিসাবে ফাল্গুনের পহেলা দিনটি মিশেছে ভালোবাসার দিনে। ঋতুরাজ বসন্ত আর ভালোবাসা দিবস বাঙালির মনের ভালোবাসা আর উচ্ছ্বাসের কোনো কমতি রাখেনি। এই দিনে প্রায় সবার হাতে হাতেই সৌন্দর্য আর ভালোবাসার প্রতীক ফুল শোভা পায়। পৃথিবীতে এমন কোনো মানুষ নেই, যে ফুল ভালোবাসে না। ফুলের যেমন রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, তেমনি রয়েছে স্বর্গীয় সুখানুভূতি।
ফুলের প্রতি ভালোবাসা সবার চিরন্তন। ফুল শব্দটা মনকে আলোড়িত করে। ‘ফুল’ কথাটার মাঝেই লুকিয়ে আছে ভালো লাগার পরশ। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে ফুল আর সুরের মূর্ছনায় দুলে উঠেছে প্রতিটি প্রেমিক-প্রেমিকার মন। আনমনে তাইতো তারা বারবার গেয়ে উঠছে ‘ভালোবাসি ভালোবাসি’, এ সুরের কাছে দূরে জলে স্থলে বাজায় বাঁশি’। প্রিয়জনকে ভালোবাসার কথা জানাতে সুনীল তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছিলেন ১০৮টা নীলপদ্ম, কিন্তু এসময়ে এসে ভালোবাসার কথা জানাতে বা ভালোবাসা দিবসে নীলপদ্ম পাওয়া না গেলেও পাড়া-মহল্লা, অলি-গলির সব জায়গাতেই পাওয়া যাচ্ছে নানা রঙের বাহারি দৃষ্টিনন্দন সব ফুল। যে কারণে ভালোবাসা দিবসকে আরও সমৃদ্ধ করতে ফুল নিয়ে মাতামাতি আজ সবখানেই।
এএসএস/এসএসএইচ