প্রায় ১৫০ কোটি টাকার সম্পত্তির মূল্য ৪৮ কোটি টাকা দেখিয়ে রাজস্ব ফাঁকি ও বোনদের বঞ্চিত করে বাবা-মায়ের সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রাজধানী আগারগাঁওয়ের ব্যবসায়ী কাজী আক্তারুজ্জামান ও কাজী আশরাফুজ্জামান নামের দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে অফশোর ব্যাংকি ও হন্ডির মাধ্যমে বিদেশ অর্থ পাচারসহ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগও রয়েছে।

অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে ওই ভাইদের গত ৩ এপ্রিল জিজ্ঞাসাবাদ করেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদক উপপরিচালক মোনায়েম হোসেন। আদালতের নির্দেশনায় দুদকের ওই অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছে বলে জানা গেছে। সোমবার দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

অভিযোগে বলা হয়, পশ্চিম আগারগাঁওয়ের ১৬৪ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা কাজী খায়রুজ্জামান (যিনি ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রম রোগে আক্রান্ত)। তার শেরে বাংলা নগর এলাকায় দুই বিঘা জমির ওপর ১৫০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের সম্পত্তি রয়েছে। এসব সম্পত্তি তার দুই ছেলে কাজী আক্তারুজ্জামান ও কাজী আশরাফুজ্জামান ঢাকার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজসে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কমিশন করিয়ে মাত্র ৪৮ কোটি টাকা মূল্য দেখিয়ে রেজিস্ট্রি করে নেন। এসব সম্পত্তি থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা এবং ব্যবসা থেকে আরও ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা সরিয়ে তা দুই ছেলের স্ত্রী ও শ্বশুর বাড়ির আত্মীয়-স্বজনের (যাদের অনেকেই বিদেশে অবস্থান) কাছে হুন্ডি ও অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাচার করা হয়। 

অভিযোগে আরও বলা হয়, খায়রুজ্জামানের স্ত্রী আক্তার জাহান ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ ব্রেইন স্ট্রোক করেন। এরপর থেকেই তিনি স্মৃতিশক্তি হারিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন। তিনি নিজের স্বামী-সন্তানের ঠিকমতো বলতে পারেন না। সম্পত্তি মূলত ছিল আক্তার জাহানের। ঢাকা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কমিশন কর্মচারী, ভেন্ডারসহ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মিলিত হয়ে আক্তার জাহানের স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি খায়রুজ্জামানের নামে দেখিয়ে তারই দুই ছেলে কাজী আক্তারুজ্জামান ও তার ছোট ভাই কাজী আশরাফুজ্জামানের নামে রেজিস্ট্রির করেন। আর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হয় দুই মেয়েকে।

এর আগে এ ঘটনায় ওই পরিবারের বড় মেয়ে কাজী রোকসানা শাহজাহান ২০২১ সালের ২৮ অক্টোবর মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (যার নম্বর-২৩০০) করেন। সেই জিডিতে তিনি বলেন, আমরা দুই বোন ও দুই ভাই। সম্প্রতি আমাদের বড় ভাই কাজী আক্তারুজ্জামান, কর্মচারী বাচ্চু মিয়া, সারোয়ার হোসেন ও এইচএম মনজুরুল আলমের সাক্ষীতে আমার মাকে সুস্থ ও স্বাভাবিক দেখিয়ে রেজিস্ট্র অফিসের কর্মচারী ও ভেন্ডার সাখাওয়াতের সহায়তায় জালিয়াতির মাধ্যমে তার সব সম্পত্তি আত্মসাত করেছেন। তারা তেজগাঁও সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস থেকে কমিশন প্রক্রিয়ায় লোক এনে অপর ভাই কাজী আশরাফুজামানের বাসায় গোপনে মোটা অংকের টাকার ঘুষের বিনিময়ে আঙুলের টিপসই নিয়ে আমার মায়ের দোতলা ও পাঁচতলা ভবন ও অর্ধবিঘার ওপর নির্মিত ভবনাদিসহ প্রায় ৫০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের সম্পত্তি প্রথমে আমার বাবা কাজী খায়রুজ্জামানের (যিনি ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রম রোগে আক্রান্ত) নামে তেজগাঁও সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের ৩৫৭০ নম্বর দলিলের মাধ্যমে ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর দান বা হেবা দেখান। পরে একই কায়দায় বাবার কাছ থেকে বোনদের নাম বাদ দিয়ে প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে শুধু দুই ভাই নিজেদের নামে তেজগাঁও সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল নম্বর ১৯৮৫/২০ এর মাধ্যমে ২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর দান বা হেবা করিয়ে নেন। আমার দুই ভাই সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজসে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে মা-বাবার শতকোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাতসহ কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন।

অন্যদিকে দুদকের আইন শাখার এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, কাজী আক্তারুজ্জামান ও কাজী আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে অফশোর ব্যাংকিং ও হন্ডির মাধ্যমে বিদেশ অর্থপাচারসহ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান স্থগিত রাখার বিষয়ে হাইকোর্টের এক আদেশ রয়েছে। ওই স্থগিতাদেশ দেওয়ায় এই অভিযোগের অনুসন্ধান চলবে কি না তার মতামত চেয়ে দুদকের আইন শাখা নথি পাঠিয়েছেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা। আইন শাখার মতামতের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরএম/এনএফ