পর্যটকের সংজ্ঞায় পরিবর্তন এবং ‘ডিউটি ফ্রি’ দোকান পরিচালনার সুযোগ রেখে ‘বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল-২০২২’ পাস হয়েছে।

মঙ্গলবার একাদশ জাতীয় সংসদের অষ্টাদশ অধিবেশনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।  

এর আগে বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

গত জানুয়ারি মাসে বিলটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

বিলে পর্যটন করপোরেশনের অনুমোদিত মূলধন ১৫ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। এছাড়া পরিশোধিত মূলধন ৪০০ কোটি টাকা হচ্ছে।

বিদ্যমান আইনে বলা হয়েছে, কেউ নিজের ঘর থেকে ভ্রমণ বা বিনোদনের জন্য ২৪ ঘণ্টার বেশি কিন্তু ছয় মাসের কম সময়ে আরেক জায়গায় থাকবে। পাস হওয়া বিলে তা এক বছর করা হয়েছে। তবে চাকরির জন্য থাকলে তাকে পর্যটক হিসেবে ধরা হবে না।

বিলে বলা হয়েছে, পর্যটন করপোরেশন ডিউটি ফ্রি দোকান পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা করতে পারবে।
১৯৭২ সালের আইনে চেয়ারম্যানের সংজ্ঞায় বলা হয়েছিল ‘বোর্ডের চেয়ারম্যান’, পাস হওয়া বিলে বোর্ডের বদলে করপোরেশনের চেয়ারম্যান করার বিধান রাখা হয়েছে।

বিদ্যমান আইনে করপোরেশনের বোর্ডে সর্বোচ্চ চারজন সদস্য থাকার বিধান আছে। সংশোধনে এই সংখ্যা বাড়িয়ে ১১ জন করা হচ্ছে। বোর্ডের চেয়ারম্যান হবেন মন্ত্রণালয়ের সচিব।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে পর্যটন শিল্প বিকাশের মাধ্যমে বেকারত্ব হ্রাস, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আয় বৃদ্ধি এবং পর্যটন করপোরেশনের পরিধি বাড়ানোর জন্য আইনটি সংশোধন করা হচ্ছে।

মন্ত্রিসভায় এ প্রস্তাব অনুমোদনের দিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছিলেন, পর্যটন করপোরেশনের বহুমাত্রিক কাজ বাস্তবায়নের সুবিধার্থে পরিষদকে নতুন করে সাজানো হচ্ছে। আগের আইনে বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত বলা ছিল না। এ আইনের আওতায় পর্যটন করপোরেশন পরিচালনা করতে একটি বিধিমালা করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বিলের উদ্দেশ্য কারণ সম্পর্কে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, আইনটি সংসদে অনুমোদন পেলে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প বিকাশের মাধ্যমে বেকারত্ব হ্রাস, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও আয় বৃদ্ধিসহ কাজের পরিধি বিস্তৃত হবে। পর্যটন শিল্প বিকাশের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন তরান্বিত হবে। পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।

বিলটি পাসের প্রক্রিয়ার সময় বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করলে মন্ত্রীরা সঠিক তথ্য দেন না। জবাব দেন অন্য রকম, বিএনপিকে টেনে এনে বক্তব্য দেন।

তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন নিয়ে তিনি বক্তব্য দিয়েছিলেন। তার বক্তব্যের জবাবে বিএনপিকে টেনে এনে বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ কা ম মোজাম্মেল হক। 

বিএনপির সংরক্ষিত আসনের রুমিন ফারহানা বলেন, দেশে চমৎকার সব পর্যটন এলাকা থাকার পরও অদক্ষতা, অযোগ্যতা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না হওয়া, অপর্যাপ্ত অবকাঠামোর কারণে পর্যটনের বিকাশ হচ্ছে না। নারী পর্যটকদের হয়রানির শিকার হওয়া স্বাভাবিক বিষয় হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই অবস্থাতেও এখন এই খাতে যা হচ্ছে তাতে এটি একটি সোনার ডিম পাড়া হাঁস। সম্প্রতি কয়েক দিনের ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। তখন আলু ভর্তা, ডাল ভাত বিক্রি হয়েছে তিন চারশ টাকায়। হোটেল ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তিন থেকে পাঁচ গুণ।

রাঙামাটিতে নিজের একটি রিসোর্ট নিয়ে সমস্যার কথা তুলে ধরে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, আইন করে কী হবে। পর্যটন শিল্পের বিকাশে বড় বাধা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। এখানে এত বেশি জটিলতা যে কেউ এ শিল্পে যাবে না।

এইউএ/আইএসএইচ