চট্টগ্রামের পাহাড় বাঁচাতে টাস্কফোর্স ও ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি
পাহাড় কাটা বন্ধে টাস্কফোর্স এবং দোষীদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানানো হয়েছে চট্টগ্রামের একটি সমাবেশ থেকে। ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম মহানগর এবং ২০১৭ সালে রাঙামাটি ও চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে নিহতদের স্মরণে এই নাগরিক সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
শনিবার (১১ জুন) এই সমাবেশের আয়োজন করে পরিবেশবাদী সংগঠন পিপল’স ভয়েস।
বিজ্ঞাপন
পরিবেশবাদী সংগঠন ‘পিপলস ভয়েস’ ২০০৭ সালের ১১ জুন পাহাড় ধসে চট্টগ্রামে ১২৭ জন নিহত হওয়ার পর থেকে প্রতিবছর এই দিনটিকে ‘পাহাড় রক্ষা দিবস’ ঘোষণার দাবিতে কর্মসূচি পালন করে আসছে।
সমাবেশ থেকে ১১ জুনকে জাতীয় পাহাড় রক্ষা দিবস ঘোষণা, ২০০৭ সালে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন, টাস্কফোর্স গঠন করে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এবং পরিবেশ সুরক্ষা করে সব উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করার দাবি জানান সংগঠনের সভাপতি শরীফ চৌহান।
বিজ্ঞাপন
পাশাপাশি সীতাকুণ্ডে ভারী শিল্পে পরিবেশ দূষণ ঠেকানো এবং অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে সব পাহাড় রক্ষার দাবি জানানো হয় সমাবেশ থেকে। এছাড়া চট্টগ্রামের পাহাড় ও নদী রক্ষায় একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে সমাবেশে বক্তারা দাবি করেন।
সমাবেশে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ ও খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম বলেন, এই পর্যন্ত শত শত তদন্ত কমিটি আমরা দেখেছি। এতে আর মানুষের মন ভোলে না। পাহাড় তো শুধু চট্টগ্রামের নয় সারাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ। এই প্রকৃতিকে ধ্বংস করার অধিকার কারো নেই। পাহাড় কেটে শেষ করা হয়েছে, আজ কর্ণফুলী ভরাট হওয়ার পথে। এ শুধু পাহাড় কাটা নয়, আমাদের প্রকৃতিকে ধ্বংস করার এ গভীর ষড়যন্ত্র। সরকারের কর্তাব্যক্তিরা মানুষের কাতারে নেমে এসে পাহাড় নদী রক্ষা না করলে সামনে সমূহ বিপদ।
সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি অধ্যাপক অশোক সাহা বলেন, এখন দেশে কে কোথায় কীভাবে কী খেয়ে লোপাট করে দেবে তাই চনলছে। দখল, মৃত্যু ও লুটতরাজ বন্ধ হয় না। এমন এক পরিস্থিতিতে আছি। অর্থনীতি রাজনীতি শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে দুঃসহ যন্ত্রণা চলছে। এত লুটপাটে ক্ষমতাভোগীরা কষ্ট পায় না, সাধারণ মানুষই মৃত্যুবরণ করে। আমাদের জন্য বিষময় ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। পরিত্রাণের জন্য সবাইকে প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট চট্টগ্রামের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, এত চড়া মূল্যে লাখো প্রাণের বিনিময়ে এই দেশটি অর্জন হয়েছে। কিন্তু জনগণ আজ দেশের মালিকানা অনুভব করতে পারছে না। অশ্লীল নিষ্ঠুর মুনাফাখোরদের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মানুষের ক্ষোভের প্লাবন হবে। যারা পাহাড়ে এসব বাসস্থান তৈরি করে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন দেশের মানুষকে দেশের মালিকানা অনুভবের সুযোগ দিন।
অধ্যাপক মো. ইদ্রিস আলী বলেন, অপরাজনীতি ও অপ-ব্যবসায়ীরা আজ সব কাজে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানাব, চট্টগ্রামে যেসব অপকর্ম হচ্ছে তা থামান। চট্টগ্রামের মানুষের আজ অরক্ষিত অবস্থা। আপনার উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে এসব যায় না। এভাবে চলতে পারে না।
কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল বলেন, পাহাড় কাটলে বিচার হয় গরিবের। বড়লোকের কোনো বিচার হয় না। পাহাড়ের পাদদেশে যারা থাকে তারা গরিব মানুষ। পাহাড় ধসে মারাও যায় তারা। এই শহরে সরকারি সংস্থা সিডিএ যখন বায়েজিদ লিংক রোড বানায় পাহাড় কেটে তখন তো বাকিরা উৎসাহিত হয়। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে পাহাড় রক্ষায়।
প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি শিল্পী রাশেদ হাসান বলেন, পাহাড় ধস কোনো নিছক দুর্ঘটনা নয়। আসল দোষীদের আমরা বাঁচিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। নেপথ্যের দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হয় না বলেই পাহাড় কাটা চলছে। প্রকৃতির উপর অত্যাচারে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয় বলেই পাহাড় ধস হয়। সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোর ঘটনায় দোষীদের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার করে শাস্তির দাবি জানাই।
সভাপতির বক্তব্যে পিপলস ভয়েসের সভাপতি শরীফ চৌহান বলেন, চট্টগ্রাম, তিন পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে পাহাড় ধ্বংস হচ্ছে। পাহাড় রক্ষায় জীববৈচিত্র রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে হবে। যারা পাহাড় দখল করেছে তাদের তালিকা পাহাড় রক্ষা কমিটি করেছিল। কারো বিরুদ্ধে আজো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি এত বছরেও সফল হতে পারেনি। এত উচ্চপদস্থ কমিটি যদি সফল না হয় তাহলে সফল হচ্ছে কারা? অবিলম্বে সব সরকারি সংস্থাকে এক জায়গায় এনে বসাতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী, পরিবেশ ও ভূমিসহ সম্পৃক্ত সবাইকে নিয়ে টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পাহাড়খেকোদের বিচার করতে হবে। কারণ পরিবেশ আদালতে সাক্ষী হাজির হয় না। ফলে মূল হোতারা পার পেয়ে যায়। শাস্তি পায় শুধু গরিব মাটিকাটা শ্রমিকরা।
পিপলস ভয়েসের সদস্য মিঠুন চৌধুরীর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কবি আশীষ সেন, সম্মিলিত আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মাহফুজ, প্রগতির যাত্রী ডটকমের সম্পাদক ফজলুল কবির মিন্টু, লেখক শিপ্রা দাশ, শিক্ষক স্বপন চন্দ্র সাহা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা, পাহাড়ি শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের সহ-সাধারণ সম্পাদক এলিন চাকমা প্রমুখ।
কেএম/জেডএস